খুলনা সিটি করপোরেশন

সিটি করপোরেশন নির্বাচন এলে প্রার্থীদের কাছ থেকে সবচেয়ে লোভনীয় যে প্রতিশ্রুতিটি ভোটাররা পেয়ে আসছেন, তার নাম ‘জলাবদ্ধতা দূরীকরণ’। ভোট শেষ হয়। নতুন মেয়র নির্বাচিত হন এবং আগের সবার মতোই নতুন মেয়র ‘জরুরি কাজে’ মাত্রাতিরিক্ত ‘ব্যস্ত’ হয়ে পড়েন। ফলে পূর্বোক্ত লোভনীয় প্রতিশ্রুতিটির বাস্তবায়ন ‘দুর্লভ’ হয়েই পড়ে থাকে।

বিশেষ করে খুলনা শহরের ক্ষেত্রে বিষয়টি দুই দশক ধরে ঘটে আসছে। নগরবাসী ‘ছোটবেলা’ থেকে শুনে আসছে ড্রেনেজব্যবস্থার হাল ফেরাতে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো আষাঢ়ের প্রথম দিন থেকেই বিরহ কিংবা ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’ টাইপের কবিতার মতো সুকুমার শিল্পচর্চার বিষয় শিকেয় তুলে ঘর সামলাতে লেগে পড়তে হয় নগরবাসীকে। হাঁটুপানিতে পা ডুবিয়ে কাজকর্ম সারতে হয়। থই থই রাস্তা ভেঙে স্কুল-কলেজে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের। নোংরা পানির ‘হাত’ ধরে আসে নানা ধরনের অসুখ-বিসুখ।

তবে এবার দিন বদলানোর আশার আলো দেখছে খুলনা নগরের বাসিন্দারা। গত মঙ্গলবার ‘নগরীর জলাবদ্ধতার কারণ চিহ্নিত ও প্রতিকারে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক ও সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউজ্জামান এ অবস্থা অবসানের জোরালো আশ্বাস দিয়েছেন। মেয়র বলেছেন, নগরকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করতে ইতিমধ্যে ৮২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। কাজও শুরু হয়েছে। নগরে আটকে থাকা পানি যে ময়ূর নদ দিয়ে বের হয়, সেটিকে দখলমুক্ত করতে অভিযান চালানো হবে। নগরের মধ্যে থাকা ২২ খাল ও তার সঙ্গে যুক্ত অন্য খালগুলোও পর্যায়ক্রমে দখলমুক্ত করা হবে। দু-এক বছরের মধ্যে জলাবদ্ধতার ব্যাপারে খুলনার মানুষ ভালো কিছু দেখবে। মেয়রের এ ঘোষণা অত্যন্ত আশাজাগানিয়া।

জলাবদ্ধতার দায় সিটি করপোরেশনকে নিতে হবে। কারণ, একটি নগরের জন্য উপযোগী নালাব্যবস্থা খুলনায় নেই। যেখানে যতটুকু গভীরতা ও ঢালু হওয়া দরকার, তা না থাকায় পানি সরতে পারে না। প্রকৌশলীদের অনিয়মের কারণে এটা হয়েছে। নগরের পানি নিষ্কাশিত হয় ২২টি খালের মাধ্যমে। কিন্তু খালগুলোর বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ এই দখল ঠেকাতে পারেনি। আর নগরবাসী দায় এড়াতে পারে না এ কারণে যে তাদের একটা বিরাট অংশ বাড়ির সামনে থাকা নালায় বর্জ্য ফেলে। এতে নালার মুখ আটকে যায়। অনেকে আবার ব্যক্তিগত স্বার্থে নালা বন্ধ করে রাখেন।

নগর কর্তৃপক্ষ ও নগরবাসী—উভয় পক্ষকেই বুঝতে হবে উন্নয়নের জন্য সবার আগে প্রয়োজন জলাবদ্ধতা দূর করা। আর এ জন্য দরকার নগরবাসীর সচেতনতা, নালাব্যবস্থার উন্নয়ন, খালগুলো দখলমুক্ত করে পানিপ্রবাহের পথ তৈরি করা। এটি শুধু নগর কর্তৃপক্ষের পক্ষে করা সম্ভব নয়। এর জন্য নগরবাসীকেও সহযোগিতা করতে হবে। এ উপলব্ধি সবার মধ্যে আসা দরকার।