সর্বোত্তম ইবাদত নামাজ

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হলো নামাজ। আল্লাহর প্রতি ইমান আনার পর মুমিন বান্দাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যপালনীয় ইবাদত হচ্ছে নামাজ। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকে ধনী-গরিবনির্বিশেষে সবার ওপর নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা ফরজ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা বিশ্বাসীদের জন্য ফরজ করা হয়েছে।’
নামাজই একমাত্র ইবাদত; যার মাধ্যমে মানুষ দুনিয়ার সব কাজ ছেড়ে শুধু আল্লাহর জন্য নিবেদিত হয়ে যায়। এ নামাজই মানুষকে দুনিয়ার সব পাপ-পঙ্কিলতা থেকে ধুয়েমুছে পাক-সাফ করে দেয়। দুনিয়ার সব অন্যায়-অনাচার থেকে হেফাজত করে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, (হে আল্লাহর রাসুল!) আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় আমল কোনটি? রাসুল (সা.) বললেন, “নামাজ” (বুখারি ও মুসলিম)।’ রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তাআলা তার থেকে নিজের জিম্মাদারি উঠিয়ে নেন।’ (বুখারি-১৮, ইবনে মাজাহ-৪০৩৪, মুসনাদে আহমদ-২৭৩৬৪)।
নামাজ এমন এক ধ্যান ও নির্ভরতা, যার মাধ্যমে সাধারণ মুসলমান সুযোগ পায় আল্লাহর সাক্ষাৎ বা দিদার লাভ করার। নামাজে বিনয়, নম্রতা, একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও তন্ময়তার মাধ্যমে এ সুযোগ পাওয়া যায়। নামাজের মাধ্যমে ধ্যান ও জ্ঞানের সমন্বয়ে আল্লাহর দরবারে নিজেকে উপস্থাপন করা যায়। শবে মিরাজের ঘটনা হলো মহান আল্লাহর সঙ্গে নবীজির সাক্ষাৎ। নামাজ বিশ্বাসীদের কাছে মিরাজ। যার মাধ্যমে মানুষ সুযোগ পায় সর্বশক্তিমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ বা দিদার। নামাজ বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে সুনিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার সেতুবন্ধ। আগে থেকেই বিভিন্ন সময়ে নামাজের প্রচলন থাকলেও ফরজ বা অবশ্যকরণীয়ভাবে মিরাজের সময় থেকে পূর্ণতা পায়। নবী করিম (সা.) সব মানুষের জন্য একটি নিয়মতান্ত্রিক ইবাদতের ব্যবস্থা হিসেবে উপহার পেয়েছিলেন।
রাসুল (সা.) মিরাজে গমন করেন। সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারিত হয়। পরে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নামাজের সময় ও পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। নামাজ কয়েক প্রকার আর তা যত উপায়ে পড়ব, তত বেশি লাভবান হব। নামাজ পাঁচ ওয়াক্তে বা সময়ে পড়তে হয়। এগুলো হলো ফজর, জোহর, আসর, মাগরিব, এশা। শুক্রবারে জুমার নামাজ। আর ফরজে কিফায়া হলো জানাজার নামাজ।
হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে চলে আসার পর ইবাদতের জন্য মদিনায় মসজিদে নববি নির্মাণ করা হলো। মানুষকে নামাজের আহ্বানের জন্য আজানের ব্যবস্থা করা হলো। প্রতি ওয়াক্ত নামাজের আগে আজান হয়। আজানের মধ্যে উচ্চারিত হয় হাইয়া আলাস সালাহ, হাইয়া আলাস ফালাহ; অর্থাৎ নামাজের জন্য হাজির হও, কল্যাণের জন্য হাজির হও। ভ্রাতৃত্ববোধের চেতনায় পাশাপাশি থেকে নামাজে এক কাতারে বাদশাহ–ফকির দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে একত্রে আত্মসমর্পণ করেন। এক নামাজ থেকে আরেক নামাজের মাঝে আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করা হয়।
কী জন্য নামাজ পড়ছি, এর সঙ্গে কী পাঠ করছি তা বুঝতে হবে। দোয়া, সুরার মানে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। মন যদি অর্থ বোঝে, তাহলে মন নামাজে থাকবে। না হলে নামাজে দাঁড়িয়ে মনে নানান চিন্তা আসতে পারে।
নামাজ আদায়ের সময় মনে করতে হবে এটাই আমার জীবনের শেষ নামাজ। মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার আর হয়তো সুযোগ না-ও পেতে পারি। জীবনের শেষ নামাজ মনে করলে মনঃসংযোগ হয়। যত্ন করে নামাজ শেষ করতে পারি। সুরা আল ইমরানের ১৮৫ আয়াতে আছে, প্রতিটি জীবকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। এ আয়াতকে উপলব্ধিতে আনতে পারি। অথবা এটাও ভাবতে পারি, আল্লাহ তাআলা আমাকে এই নামাজ পড়ার সুযোগ দিয়েছেন। নামাজ শেষে আমার মৃত্যু। মৃত্যু পরোয়ানা আসামিকে শোনানোর পর যে অবস্থা হয়, তা-ও কল্পনায় আনতে পারি।
এক নামাজের শেষে আমরা যেন আরেক নামাজের পূর্বমুহূর্তে নিজেদের ভালো কাজে রাখি। কাজই ইবাদত। এক নামাজ থেকে আরেক নামাজ পর্যন্ত সবাই সৎ জীবিকা সন্ধানের চেষ্টা করব। এটাই আল্লাহর আদেশ।
সুরা জুমার ১০ নম্বর আয়াতে আছে, তোমরা নামাজ আদায় করার পর জমিনে ছড়িয়ে পড়ো, আল্লাহর দেওয়া জীবিকা অন্বেষণ করো এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।

ফেরদৌস ফয়সাল: প্রথম আলোর হজ প্রতিবেদক