উজিরপুরের একটি সড়ক

৩০ বছর ধরে একটি সড়কের সংস্কার হচ্ছে না। ভাবা যায়! কিন্তু তা-ই ঘটেছে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা থেকে রাজাপুর পর্যন্ত সড়কের ক্ষেত্রে। স্থানীয় প্রশাসন বা সড়ক সংস্কারের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ কারোরই মনে হয়নি এ সড়কটি সংস্কার করা দরকার।

শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, উজিরপুর উপজেলার সাতলা থেকে রাজাপুর পর্যন্ত সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। সাড়ে তিন কিলোমিটার এই কাঁচা রাস্তায় ১৯৮৫ সালে ইট বসানো হয়। ১৯৮৮ সালে বন্যায় বিভিন্ন অংশ ভেঙে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়। সেই থেকে ৩০ বছর রাস্তাটি সংস্কার হয়নি। এত বছরে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে ইট উঠে গিয়ে তা কাঁচা রাস্তায় পরিণত হয়েছে।

অথচ প্রায় ২৫ হাজার মানুষ প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। একসময় এই সড়কে ট্রাক-টেম্পো চলাচল করত। কিন্তু এখন যে হাল হয়েছে তাতে ট্রাক, টেম্পো তো দূরের কথা, রিকশা-ভ্যানও চলতে পারছে না। হেঁটে চলাচল করা ছাড়া এখন আর কোনো উপায় নেই। এতে করে এই অঞ্চলের পোলট্রিশিল্প ও মাছ চাষের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। আগে তাঁরা তাঁদের পণ্য ট্রাক, টেম্পোতে করে জেলা-উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে সরবরাহ করতেন। কিন্তু সড়ক খারাপ হওয়ার কারণে পাইকার না আসায় তাঁদের মাছ ও পোলট্রি মুরগি কম মূল্যে বিক্রি করতে হয়।

এলাকাবাসী বিভিন্ন সময় সড়কটি সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। তা সত্ত্বেও সড়ক সংস্কারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। একটি সড়ক সংস্কার হচ্ছে না ৩০ বছর ধরে। এটা কি কোনো যুক্তিতে গ্রহণযোগ্য? কেন এলাকাবাসীর আবেদনের পরও সড়কটি সংস্কার হচ্ছে না? এটা তো সুস্পষ্ট গাফিলতি। কোনো সড়ক সংস্কারের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাদের উদ্যোগ থাকলে একটি রাস্তা এত দিন সংস্কারবিহীন থাকার কথা নয়।

তবে শুধু উজিরপুরের এ সড়কই নয়। দেশের বহু স্থানে বহু সড়ক সংস্কারবিহীন অবস্থায় পড়ে আছে; কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সেগুলো ঠিক করার উদ্যোগ নেই। মনে রাখতে হবে, একটি দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা। সে জন্য সড়ক ঠিক করতে হবে সবার আগে। একটি সড়ক ৩০ বছর ধরে মেরামত না করে ফেলে রাখা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়।

উজিরপুরের সাতলা থেকে রাজাপুর পর্যন্ত সড়কের দেখভালের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) উজিরপুর কার্যালয়ের। আমরা চাই তাদের টনক নড়ুক। তারা খুব দ্রুত এই সড়ক সংস্কারের ব্যাপারে উদ্যোগী হবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।