কুষ্টিয়া চিনিকল

কুষ্টিয়া চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখচাষিদের সঙ্গে যে আচরণ করছে, তাকে এককথায় বলতে হয় নিষ্ঠুর প্রতারণা। প্রতারণা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, কিন্তু চিনিকল কর্তৃপক্ষের সেই বোধ আছে বলে মনে হচ্ছে না।

রোববার প্রথম আলোর দক্ষিণাঞ্চলীয় সংস্করণের প্রথম পাতায় এ বিষয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুষ্টিয়া চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখচাষিদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, আখ সরবরাহ করার তিন দিনের মধ্যেই আখের দাম বাবদ অর্থ আখ সরবরাহকারী কৃষকের কাছে মুঠোফোনের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পৌঁছে যাবে। আখচাষিরা এই প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করেছিলেন, তাঁরা তাঁদের উৎপাদিত আখ ওই চিনিকলে সরবরাহ করেছেন। কিন্তু তারপর তিন দিন নয়, তিন মাস পেরিয়ে গেছে, আখচাষিরা তাঁদের আখের দাম বাবদ একটি টাকাও পাননি।

কুষ্টিয়া চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারওয়ার মোরশেদ এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোর প্রতিনিধিকে বলেছেন, ওই চিনিকলে আখ বিক্রি বাবদ চাষিদের মোট বকেয়া পাওনা হয়েছে ১৩ কোটি টাকা। চাষিরা এই টাকা কবে পাবেন, তার কোনো সুনির্দিষ্ট সময় বলা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, কুষ্টিয়া চিনিকল লোকসানি প্রতিষ্ঠান, এটি সচল আছে সরকারের দেওয়া ভর্তুকির জোরে।

এটা সত্য, কুষ্টিয়া চিনিকল ২০০৬ সালের পর থেকে লোকসানেই চলছে। তাহলে কেন জেনেশুনে আখচাষিদের এই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল যে তাঁরা আখ সরবরাহ করার তিন দিনের মধ্যেই তাঁদের আখের দাম মুঠোফোনের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে? চিনিকল কর্তৃপক্ষের নিশ্চয়ই স্মরণে আছে, সেখানে আখ বিক্রিতে চাষিদের হয়রানি, আখ সরবরাহ করার পর টাকা পেতে দীর্ঘ বিলম্ব ইত্যাদি নানা কারণে ওই অঞ্চলের চাষিরা আখ ফলানো ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছিলেন। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিল যে আখের অভাবে চিনিকলটি বন্ধই হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এ অবস্থায় চিনিকল কর্তৃপক্ষ চাষিদের নতুন করে আশ্বাস দেওয়ার আগে কেন ভেবে দেখেনি যে এই আশ্বাস তারা কীভাবে পূরণ করবে? সহজ-সরল চাষিরা, যাঁদের অধিকাংশই দরিদ্র, যাঁদের নিজের জমির পরিমাণ যৎসামান্য, অন্যের জমি বর্গা নিয়ে, ঋণ-কর্জ করে আখ ফলানোর খরচ জুগিয়েছেন, তাঁরা চিনিকল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে নতুন করে আশান্বিত হয়ে আবারও আখ চাষে ফিরে এসেছেন। এখন তাঁরা তাঁদের ফলানো আখ বিক্রি করে টাকা না পেয়ে বর্গাদার, মজুরদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে এ রকম ভুক্তভোগী কয়েকজন আখচাষির মর্মবেদনা ও ক্ষোভের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। এক আখচাষি বলেছেন, তিনি টাকার অভাবে এমনকি ছেলের বিদ্যালয়ের বেতন পর্যন্ত পরিশোধ করতে পারছেন না। কেউ কেউ ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, আগামী মৌসুমে আর আখ চাষ করবেন না।

কুষ্টিয়া চিনিকল কর্তৃপক্ষকে যেকোনো উপায়ে হোক, আখচাষিদের পাওনা টাকা যত দ্রুত সম্ভব পরিশোধ করতে হবে। লোকসান কাটিয়ে চিনিকলটিকে কীভাবে লাভজনক করা যায়, সে বিষয়টির সঙ্গে আখচাষিদের কোনো সম্পর্ক নেই।