দুর্বোধ্য সতর্কসংকেত

বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। বন্যা, ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে প্রায়ই পড়ে এ দেশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস দেখা দিলে দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর বিভিন্ন স্থানে সতর্কসংকেত দিয়ে থাকে, যাতে মানুষ সচেতন হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সবাই কি এসব সতর্কসংকেত বুঝতে পারে?

সোমবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্যোগ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রচারিত সংকেত নিয়ে বিভ্রান্তি আছে উপকূলের মানুষের মধ্যে। বিশেষ করে দূরবর্তী চর ও প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের কাছে সময়মতো এসব সংকেত পৌঁছায় না। আবার পৌঁছালেও তারা এসব সংকেতের অর্থ বুঝতে পারে না। কোন সংকেতে কোন ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে এবং এ সময় কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, তা তারা জানে না। যদিও ঝড়ের আগে গণমাধ্যমগুলোতে এ বিষয়ে প্রচার চালানো হয়। আবার সাগরের গভীরে গেলে রেডিও শোনা যায় না। ফলে রেডিওতে সতর্কসংকেত প্রচার করা হলেও তখন তা জেলেদের কোনো কাজে আসে না। গভীর সাগরে মোবাইলের নেটওয়ার্কও থাকে না। ফলে জেলেরা বিপদে পড়েন।

উপকূলবাসীর প্রাকৃতিক দুর্যোগের সতর্কসংকেত বুঝতে না পারার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। কেননা ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস হলে তারাই সবার আগে আক্রান্ত হয়। সতর্কসংকেত না বোঝার কারণে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার সময় এমনটাই হয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা বিশ্বের প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে দেশে ঘূর্ণিঝড়সহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে। কাজেই উপকূলবাসীর সতর্কসংকেতের অর্থ বোঝাটা খুবই জরুরি।

যেহেতু বিদ্যমান সতর্কসংকেতের ব্যবস্থা উপকূলবাসীর খুব একটা কাজে আসছে না, তাই সতর্কসংকেতের ব্যবস্থা পাল্টাতে হবে। সবাই বুঝতে পারে, এমন সতর্কসংকেতের প্রচলন করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা সব মানুষের কাছে যাতে সতর্কসংকেত পৌঁছায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে দুর্যোগের সচেতনতা নিয়ে কাজ করেন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবকেরা। এই কর্মসূচি উপকূলের ১০ জেলার ৪০টি উপজেলায় চালু আছে। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, বর্তমানে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সিপিপির ৫৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবী ঝিমিয়ে পড়েছেন। তাঁদের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে সিপিপিকে সক্রিয় করতে হবে।

সংকেত প্রচারের ক্ষেত্রে স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনকে আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।