ঝিনাইদহে ছাত্রীদের বেত্রাঘাত

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার সলিমুননেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাফিজুর রহমান অতি সামান্য কারণে নবম শ্রেণির ১৫ জন ছাত্রীর সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করেছেন। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, গত সোমবার ওই শিক্ষক পারিবারিক তথ্য সংগ্রহের জন্য নবম শ্রেণির ছাত্রীদের একটি করে ফরম দিয়েছিলেন। পরদিন বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করে তাঁর কাছে জমা দেয়; কিন্তু ১৫ জন শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করে জমা দেয়নি। কেন তারা ফরম পূরণ করতে পারেনি, তা শিক্ষকের কাছে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি ছাত্রীদের কোনো কৈফিয়ত না শুনে তাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে বেত্রাঘাত করতে থাকেন। ফলে কয়েকজন ছাত্রীর শরীরে ক্ষত তৈরি হয়েছে। অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির কাছে চিঠি দিয়ে প্রতিকার চাওয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আছে: শিক্ষার্থীকে শারীরিক প্রহার করা যাবে না। কিন্তু দেশের অনেক বিদ্যালয়ে এই নির্দেশনা মেনে চলা হয় না। এটি আমাদের উদ্বিগ্ন ও বিচলিত করে। একজন শিক্ষক কেন তাঁর শিক্ষার্থীদের প্রতি এতটা নির্মম হবেন? শিক্ষার্থীরা ভুল করলে শাস্তি হিসেবে শিক্ষক তাদের বেধড়ক পেটাবেন কেন? কোনো শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ করে নিয়ে না আসার পক্ষে যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে। এই ফরম পূরণ করতে হলে অভিভাবকদের সাহায্য প্রয়োজন। কারও কারও অভিভাবক এক দিনে ফরমটি পূরণ করার অবস্থায় না-ও থাকতে পারেন। কিন্তু কোনো ব্যাখ্যা না শুনে শিক্ষার্থীদের প্রহার করা মোটেও শিক্ষকসুলভ আচরণ হয়নি। বেত্রাঘাতে ওই কিশোরী শিক্ষার্থীরা শুধু শারীরিক আঘাতই পায়নি, তাদের মনেও আঘাত লেগেছে; তাদের অপমান বোধ হয়েছে। কোনো শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন নির্দয় ও অপমানজনক আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।

একটি ফরম পূরণ করে ঠিক সময়ে জমা দিতে না পারা কোনো শিক্ষার্থীর এমন অপরাধ নয়, তার শাস্তি হিসেবে তাকে বেত দিয়ে মারতে হবে।
আসলে তো কোনো কারণেই শিক্ষকের অধিকার নেই শিক্ষার্থীকে প্রহার করার। ওই শিক্ষকের উচিত ছিল শিক্ষার্থীদের ব্যাখ্যা ধৈর্যসহকারে শোনা, প্রয়োজনে তাদের অভিভাবকদের ডেকে তাঁদের সঙ্গে কথা বলা। কিংবা ফরমটি কীভাবে পূরণ করতে হবে, তা ওই শিক্ষকেরই দেখিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। যে শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণ করে জমা দিয়েছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া যেত। আমরা আশা করব, ওই শিক্ষক আর কখনো শিক্ষার্থীদের প্রহার করবেন না।

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের প্রহার করা বা কোনো ধরনের অপমানজনক শাস্তি দেওয়ার খবর এখনো মাঝেমধ্যে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এর অর্থ শিক্ষকদের একটা অংশের মানসিকতা সেকেলেই রয়ে গেছে। এই মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ভূমিকা রাখা উচিত।