আবার ভাঙনের আশঙ্কা

পদ্মার পাড়ে একের পর এক ঝপ ঝপ শব্দ। একটার পর একটা বিশাল বিশাল মাটির চাঙড় ভেঙে পড়ছে। এক হাত-দুই হাত করে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে নদী। তিনতলা-চারতলা ভবন হুড়মুড় করে ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে। স্রোতের করালগ্রাসে চলে যাচ্ছে স্কুল-কলেজ, দোকানপাট, আবাদি জমি। সচ্ছল গেরস্ত কয়েক মুহূর্তে হয়ে যাচ্ছেন সবহারা নদী শিকস্তি।

গত বছরের অর্ধেকের বেশি সময়জুড়ে এই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায়। পদ্মাতীরের গোটা লোকালয়ে মানুষের চোখেমুখে ছিল হাহাকার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ভেসে বেড়ানো সেই সর্বনাশের খণ্ডচিত্রগুলো পুরো দেশবাসীকে গভীর উদ্বেগে ফেলে দিয়েছিল।

এখন পদ্মা শান্ত। নড়িয়ার মোক্তারেরচর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রাম থেকে কেদারপুর ইউনিয়নের পাঁচগাঁও পর্যন্ত যে আট কিলোমিটার এলাকা গত বছর তীব্র ভাঙনের শিকার হয়েছিল, এখন সেখানে কোনো স্রোত নেই। ছোবলের চিহ্ন আছে। নদীতীরের পাঁচ শ থেকে ছয় শ মিটার দূরে গভীরতা অনেক। তারপরই জেগেছে বিশাল চর। গত বর্ষা মৌসুমের আগেও এত বড় চর ছিল না সেখানে। এই চর দেখে অন্য এলাকার কারও মনে হতে পারে, যাক শিকস্তিরা এবার পয়স্তি হচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া জমির কিছু অংশ হয়তো তারা ফেরত পাবে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানেন, এই চর ওঠা মানে সামনে আরও ভয়াবহ দিন আসছে। তাঁরা জানেন, নদীর এক পাশে বিশাল চর থাকলে অপর প্রান্তে ভাঙন প্রবল হয়। তাঁদের আশঙ্কা, আগামী বর্ষা মৌসুমেও প্রবল ভাঙন হবে। এই চিন্তা স্থানীয় বাসিন্দাদের মহা আতঙ্কে ফেলে দিয়েছে।

ভাঙন রোধে সরকার ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছে। তীর রক্ষা ও চর খননের কাজ চলছে। সরকার ভাঙন ঠেকাতে ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকার প্রকল্প চালু করেছে। কাজও চলছে। এর ৫০ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা হবে নদীর তীর রক্ষার কাজে, আর ৫০ শতাংশ টাকা ব্যয় হবে চর খননের কাজে। তীর রক্ষা কার্যক্রমে প্রায় ৯ কিলোমিটার এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা চলছে। উদ্বেগের কথা হলো, সরকারের এই চেষ্টায় স্থানীয় বাসিন্দারা মোটেও ভরসা পাচ্ছেন না। এই জিও ব্যাগে কতটুকু কাজ হবে, তা নিয়ে তাঁদের সন্দেহ রয়েছে। পাউবোর প্রকৌশলীরাও বলেছেন, তাঁরা দুশ্চিন্তায় আছেন।

হাজার কোটি টাকা খরচ করেও যদি ভাঙন ঠেকানোর নিশ্চয়তা না পাওয়া যায়, তাহলে তো সবই অর্থহীন। প্রকৌশলীরা যদি বুঝতে পারেন এই ব্যবস্থার ওপর ভরসা করা যাবে না, তাহলে ভিন্ন কোনো কার্যকর পদ্ধতি খুঁজে বের করতে হবে। গত বছরের ভাঙনের ছোবলের ঘা এখনো শুকায়নি। এ বছর আবার যদি পদ্মা ছোবল মারতে আসে, তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ফলে যেকোনো মূল্যে ভাঙন রোধ করতে হবে। প্রয়োজনে বরাদ্দ আরও বাড়ানো ও নদীশাসনে অভিজ্ঞ ও দক্ষ আন্তর্জাতিক প্রকৌশলীদের সহায়তা নেওয়া হোক।