স্বাস্থ্যসেবাবঞ্চিত চরাঞ্চল

মানুষের মৌলিক পাঁচটি অধিকারের অন্যতম হলো চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার। কিন্তু বুধবার প্রথম আলোয় মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যসেবার যে বেহাল চিত্র প্রকাশিত হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে না তাদের সেই অধিকার আছে।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, উপজেলার বাচামারা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ১৯৮৮ সালের বন্যায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকে বাচামারা বাজারে ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত একটি টিনের ঘরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির কার্যক্রম চলছে। কিন্তু বেশির ভাগ দিনই তা তালাবদ্ধ থাকে। ফলে সেবা নিতে আসা লোকজনকে প্রায়ই চিকিৎসা না নিয়ে ফিরে যেতে হয়। উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে একজন চিকিৎসক, একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী থাকার কথা। তবে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ও ফার্মাসিস্ট ছাড়া বাকি দুটি পদ শূন্য।

উপজেলার চরাঞ্চলের অন্যান্য উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোরও অবস্থা প্রায় একই। ২০১৬ সালের বন্যায় বাঘুটিয়া
কমিউনিটি ক্লিনিক ও পাচুরিয়া কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ২০১৮ সালের বন্যায় পারুরিয়া কমিউনিটি ক্লিনিক নদীগর্ভে চলে যায়। এরপর থেকে এসব সরকারি ক্লিনিক অস্থায়ীভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে। নদীতে ভেঙে যাওয়ায় চরকাটারী ইউনিয়নে কোনো কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। তাই চরের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো অস্থায়ীভাবে বিভিন্ন স্থানে কোনোভাবে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালাচ্ছে।

বাংলাদেশের বড় অংশজুড়ে রয়েছে চর এলাকা। দেশের প্রায় ৩২টি জেলার শতাধিক উপজেলার অংশবিশেষ চরাঞ্চল। অথচ জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় চরাঞ্চলগুলোকে অবহেলা করা হয়। ফলে স্বভাবতই উন্নয়নের মূলধারা থেকে পিছিয়ে পড়ছে চরের বাসিন্দারা। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের নাগরিকেরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পায়, তাদেরও সেসব পাওয়ার অধিকার আছে। চরের মানুষকে অবহেলা, অবজ্ঞা করে দেশের উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তারা যে শুধু চিকিৎসা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা নয়। অন্য চারটি মৌলিক অধিকার খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থানসহ অন্যান্য অধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত। ফলে নিরন্তর দুঃখ-কষ্টের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করতে হয় তাদের।

চরাঞ্চলের মানুষের এসব কথা বিবেচনা করে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় অবশ্যই চরাঞ্চলের কথা মাথায় রাখতে হবে। চরাঞ্চলে কৃষির উন্নয়নসহ নানা সম্ভাবনা রয়েছে। সেসব দিকে নজর দিতে হবে। এ জন্য জাতীয় বাজেটে যথেষ্ট বরাদ্দ রাখতে হবে।

প্রতিটি চরে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। আমাদের দেশের অনেক ক্ষেত্রে একটি প্রধান সমস্যা চিকিৎসকদের গ্রামে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকতে না চাওয়া। ফলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলার পাশাপাশি চিকিৎসকেরা যাতে কর্মস্থলে থাকেন, সেই পরিস্থিতিও তৈরি করতে হবে।