জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের রুশ-সংযোগ

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণাপর্বে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার উদ্দেশ্যে রুশ সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ করেছিলেন কি না, এই প্রশ্নে রবার্ট ম্যুলারের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সময় আমার মনে পড়ছিল জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে। কারণ, পশ্চিমা পত্রপত্রিকায় এমন অভিযোগ অনেকবার পড়েছি যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করার রুশ প্রচেষ্টায় ট্রাম্পের রুশ–সংযোগের অন্যতম প্রধান সূত্র ছিলেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, যিনি প্রায় সাত বছর ধরে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আটকা পড়ে আছেন।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে অ্যাসাঞ্জের খবর এখন খুব কম প্রকাশিত হয়। স্মরণ করা যেতে পারে, ২০১০ সালে সুইডেনে দুই নারী, যাঁরা অ্যাসাঞ্জের বন্ধুস্থানীয় ছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে যৌন অসদাচরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছিলেন। মামলার তদন্ত শুরুর সময় অ্যাসাঞ্জ লন্ডনে অবস্থান করছিলেন, সুইডিশ প্রসিকিউশন কর্তৃপক্ষ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে সুইডেনে হাজিরা দিতে বলেছিল। কিন্তু অ্যাসাঞ্জ আর সুইডেনে যেতে রাজি হননি। কারণ, তিনি দাবি করছিলেন, ওই দুই নারীকে দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা করিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র তাঁর ওপর ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়েছে এ জন্য যে তিনি আফগানিস্তান ও ইরাকের যুদ্ধে মার্কিন সেনাবাহিনীর যুদ্ধাপরাধমূলক কর্মকাণ্ডসহ অনেক অন্যায়–অপকর্মের প্রমাণস্বরূপ ভিডিও চিত্রসহ কয়েক লাখ গোপনীয় সামরিক নথিপত্র উইকিলিকস ওয়েবসাইটে ফাঁস করে দিয়ে পৃথিবীজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলেন। আরও বড় একটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল অ্যাসাঞ্জের উইকিলিকস: বিশ্বময় ব্যাপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের ২৭৪টি দূতাবাস, কনস্যুলেট ও কূটনৈতিক মিশনে দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রদূত, চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ও অন্যান্য কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের লেখা ও ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের সদর দপ্তরে পাঠানো ২ লাখ ৫১ হাজার ২৭৮টি গোপনীয় ও অতিগোপনীয় তারবার্তার এক বিশাল ভান্ডার ফাঁস করে দিয়েছিল।

এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন সরকার, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানগুলো অ্যাসাঞ্জের প্রতি ভীষণ রুষ্ট হয়েছিল। অ্যাসাঞ্জ অভিযোগ করে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে হত্যা করতে চায়। সে জন্য তাঁকে লন্ডন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। অ্যাসাঞ্জের দাবি, তাঁকে হত্যা করা হবে যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচরবৃত্তি–সংক্রান্ত আইনে বিচার করে সর্বোচ্চ সাজা দিয়ে। ওই আইনের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। অ্যাসাঞ্জ যদি সুইডেনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য লন্ডন থেকে স্টকহোম যেতেন, তাহলে সুইডিশ কর্তৃপক্ষ তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিত—এই আশঙ্কায় অ্যাসাঞ্জ সুইডেনে যাননি। তিনি সুইডিশ প্রসিকিউশনকে বলেছিলেন, লন্ডনে এসে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে। কিন্তু সুইডিশ প্রসিকিউটররা তাতে রাজি হননি। তাঁরা ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনে প্রত্যাবাসন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন, ইন্টারপোল অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করার জন্য হুলিয়া জারি করেছিল। অ্যাসাঞ্জ ব্রিটিশ পুলিশের কাছে হাজিরা দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, কয়েক দিন জেল খাটার পর ব্রিটেনের কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তির সহায়তায় তিনি জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়েছিলেন, কিন্তু সম্পূর্ণ মুক্তি পাননি। তাঁর জামিনদারদের অন্যতম ভগান স্মিথ নামের এক অভিজাত ব্যক্তির বাড়িতে নজরবন্দি ছিলেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে তিনি পালিয়ে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেন, দেশটির সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন। ইকুয়েডরের সে সময়ের প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়ার সঙ্গে অ্যাসাঞ্জের ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক ছিল, অ্যাসাঞ্জ ইকুয়েডরে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়ে যান। তাঁকে লন্ডন থেকে ইকুয়েডরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু ব্রিটিশ পুলিশ হুমকি দিয়েছিল যে অ্যাসাঞ্জ ইকুয়েডর দূতাবাসের বাইরে বেরোলেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। ব্রিটিশ পুলিশ দিনরাত দূতাবাসের চারপাশ ঘেরাও করে থাকত, যেন অ্যাসাঞ্জ পালিয়ে যেতে না পারেন। এটা ২০১২ সালের জুন মাসের ঘটনা।

সেই থেকে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসেই অ্যাসাঞ্জের অন্তরীণ দশা চলছে। এর মধ্যে গত ২২ মার্চ শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল কাউন্সেলর রবার্ট ম্যুলার অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বারের কাছে তাঁর ৩০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিলেন। সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবি উঠেছে, কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের লোকজন সেই দাবির বিরোধিতা করছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার অবশ্য সেই প্রতিবেদন সম্পর্কে তাঁর প্রাথমিক পর্যালোচনার একটি সারসংক্ষেপ বিচার বিভাগীয় কমিটির কাছে জমা দিয়েছেন। নিউইয়র্ক টাইমস ও অন্যান্য সংবাদপ্রতিষ্ঠান সেই সারসংক্ষেপের ভিত্তিতে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবং সারসংক্ষেপটির একটি কপিও প্রকাশ করেছে।

উইলিয়াম বার বিচার বিভাগীয় কমিটিকে জানিয়েছেন, ম্যুলার প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘রিপোর্ট অন দ্য ইনভেস্টিগেশন ইনটু রাশান ইন্টারফিয়ারেন্স ইন দ্য ২০১৬ প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশনস’। এটি দুই অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের (ইন্টারফিয়ারেন্স) অভিযোগের তদন্তের ফলাফল বর্ণনা করা হয়েছে। নির্বাচনকে প্রভাবিত করার (ইনফ্লুয়েন্স) রুশ প্রচেষ্টা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে এবং সেসব প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িত ছিলেন রুশ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন কিছু ব্যক্তির অপরাধের প্রমাণ হাজির করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, স্পেশাল কাউন্সেল ম্যুলারের তদন্তের প্রাথমিক বিবেচনা ছিল নির্বাচনকে প্রভাবিত করার রুশি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাসহ কোনো আমেরিকান নাগরিক যোগ দিয়েছিলেন কি না, দিয়ে থাকলে সেটা হতো একটা ফেডারেল ক্রাইম। এ বিষয়ে ম্যুলারের প্রতিবেদন থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল এই উদ্ধৃতি দিয়েছেন, ‘নির্বাচনকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে রুশ সরকারের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা দলের কোনো সদস্য ষড়যন্ত্র বা সহযোগিতা করেছেন, এমন কোনো প্রমাণ তদন্তে প্রতিষ্ঠা পায়নি।’ তবে ম্যুলারের তদন্তে এটা সাব্যস্ত করা হয়েছে যে ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে রুশ প্রচেষ্টা ছিল প্রধানত দুটি। প্রথমটি ছিল ‘ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সি’ (আইআরএ) নামের একটি রুশ সংস্থার, যারা মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের লক্ষ্যে মার্কিন সমাজে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে গুজব ছড়ানোসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা তৎপরতা চালিয়েছে। আইআরএর এসব তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এমন কিছু রুশ নাগরিক ও সংস্থার বিরুদ্ধে স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট ম্যুলার ফৌজদারি অপরাধ (ক্রিমিন্যাল চার্জেস) সংঘটনের অভিযোগ তুলেছেন, কিন্তু কোনো মার্কিন নাগরিক বা ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত কোনো কর্মকর্তা আইআরএর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন বা জ্ঞাতসারে সহযোগিতা করেছিলেন, এমন কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ ম্যুলার তাঁর তদন্তে পাননি।

ম্যুলারের প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে রুশ সরকারের দ্বিতীয় প্রচেষ্টা ছিল কম্পিউটার হ্যাকিং। ম্যুলার তাঁর তদন্তে এমন প্রমাণ পেয়েছেন যে রুশ সরকারের কিছু লোক ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণাপর্বে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণা দল ও ডেমোক্রেটিক পার্টির কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তির কম্পিউটার সাফল্যের সঙ্গে হ্যাক করে তাঁদের ই–মেইল বার্তা হাতিয়ে নিয়েছেন এবং উইকিলিকস ও অন্যান্য মাধ্যমে সেগুলো বিতরণ করেছেন।

ম্যুলার প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে পেশ করার এক দিন আগে ২০ মার্চ নিউইয়র্ক টাইমস–এ এক প্রতিবেদনে লেখা হয়, পত্রিকাটি জানতে পেরেছে, ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচারণাকে স্যাবোটাজ করার বহুমুখী তৎপরতার অংশ হিসেবে রাশিয়ার শীর্ষ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচারণা দলের চেয়ারম্যানের ই–মেইল অ্যাকাউন্টসহ ডেমোক্রেটিক পার্টির বিভিন্ন সংগঠনের কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাক করে কয়েক লাখ ‘চুরি করা ই–মেইল’ বার্তা উইকিলিকসের মাধ্যমে জনসমক্ষে প্রচার করেছে বলে ম্যুলারের প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস–এর ওই প্রতিবেদনে ১২ জন শীর্ষস্থানীয় রুশ সামরিক গোয়েন্দার ছবির পাশে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্ত করা হয়েছে শুধু রুশদের।

রবার্ট ম্যুলার তাঁর প্রতিবেদনে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে ব্যক্তিগতভাবে অভিযুক্ত করেননি, শুধু তাঁর ওয়েবসাইট উইকিলিকসের নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আমেরিকায় একটি গ্র্যান্ড জুরি অ্যাসাঞ্জকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করতে চায়, এমন খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে একাধিকবার প্রকাশিত হয়েছে। অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশে চেলসি ম্যানিং নামের সেই সাবেক মার্কিন সেনা কম্পিউটার অ্যানালিস্টকে গ্র্যান্ড জুরির সামনে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বলা হয়েছে, যিনি ইরাক যুদ্ধের গোপনীয় নথিপত্র ও ভিডিও ক্লিপ উইকিলিকসকে দিয়েছিলেন বলে বিচারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদায় নেওয়ার সময় তাঁর দণ্ড মওকুফ করেছিলেন এবং তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে গ্র্যান্ড জুরির সামনে সাক্ষ্য দেননি বলে তাঁকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া সম্ভব, তা এখনো বোধগম্য নয়। রুশদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের অভিযোগ পুরোনো, তিনি হিলারি ক্লিনটনকে ঘৃণা করতেন, তাঁকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চাননি, এমন কথাও তিনি বলেছেন। হিলারি যেন নির্বাচনে ভোট কম পান, সে চেষ্টা অ্যাসাঞ্জ অবশ্যই করে থাকতে পারেন, কিন্তু সেটা কম্পিউটার হ্যাক করার মতো অপরাধের মাধ্যমে নয়। উইকিলিকস নিজে কম্পিউটার হ্যাক করে না, হ্যাক করে পাওয়া কিংবা কোনো সরকার বা প্রতিষ্ঠানের ভেতরের কোনো হুইসলব্লোয়ারের চুরি করা গোপনীয় তথ্য প্রকাশ করে, যেসব তথ্য সর্বসাধারণের জানা উচিত বলে অ্যাসাঞ্জ ও উইকিলিকসের সদস্যরা মনে করেন। হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচারণা দলের চেয়ারম্যান ও অন্যদের ই–মেইল অ্যাকাউন্ট রুশরা হ্যাক করে থাকতে পারেন, সে জন্য উইকিলিকস বা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে দায়ী করা যাবে না। চুরি করা তথ্য উইকিলিকস প্রকাশ করেছে, এটা আমেরিকার কোনো আইনেই অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী, কোনো তথ্য বা বক্তব্য প্রকাশ করা ফৌজদারি অপরাধ নয়। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ উইকিলিকসকে একটা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও নিজেকে প্রকাশক বলে দাবি করেন। কিছু প্রকাশ করার দায়ে আমেরিকায় তাঁর বিচার করতে হলে একই কারণে নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট ও অন্যান্য সংবাদপ্রতিষ্ঠানেরও বিচার করতে হয়। কারণ, তারাও উইকিলিকসের মতোই ‘চুরি করা’ ই–মেইল বার্তাসহ অন্যান্য নথিপত্রের ভিত্তিতে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যার ফলে হিলারি ক্লিনটন ও ডেমোক্রেটিক পার্টির কিছু অনৈতিক আচরণের কথা জানতে পেরে আমেরিকার অনেক ভোটার তাঁকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন।

মশিউল আলম: প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ও সাহিত্যিক
[email protected]