মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর

বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বিরাজমান উচ্চ হারের বেকারত্ব নিরসনে বাস্তবসম্মত কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনা না নেওয়াটাই সরকারি নীতি হিসেবে টিকে আছে। এর মধ্যে সরকারি চাকরির কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার দীর্ঘ সময় ধরে একটা নৈরাজ্যিক অবস্থাও চলমান। এর একটি দুর্ভাগ্যজনক উদাহরণ হলো মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে নিয়োগ।

দুই বছর থেকে তিন দশক পর্যন্ত সরকারি কলেজে অস্থায়ীভাবে (মাস্টাররোল) কর্মরতদের সংখ্যা এখন প্রায় দুই হাজার। শিক্ষা অধিদপ্তরের নীতিনির্ধারকদের এটা অজানা থাকার কথা ছিল না যে মাস্টাররোল কর্মচারীদের আত্তীকরণের প্রশ্নের একটা ফয়সালা না করেই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে সরাসরি নিয়োগের কোনো উদ্যোগ নিলে সেটা আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। অথচ তেমনই পদক্ষেপ তারা বিনা দ্বিধায় নিয়েছিল। ২০১৩ সালে মোট ২২টি পদে প্রায় দুই হাজার জনের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রায় চার লাখ দরখাস্ত পড়েছিল। সেই পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তা বাতিল করা হয়েছিল। চার বছরের ব্যবধানে ২০১৭ সালে সেই পরীক্ষা সম্পন্ন করার পরে মাস্টাররোলে থাকা কর্মচারীরা আগে তাঁদের দিয়ে শূন্য পদ পূরণ করার দাবিতে জেগে উঠেছিলেন। কিন্তু সরকারি প্রশাসন অভ্যাসগতভাবে তাতে কর্ণপাত না করলে সংক্ষুব্ধরা হাইকোর্টে রিট করেন।

প্রসঙ্গক্রমে আমরা দুঃখের সঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে জনপ্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের অসাবধানতা বা খেয়ালখুশিমাফিক সিদ্ধান্তের কারণে যে উচ্চ আদালতে অযথা মামলাজট বাড়ে, এ ঘটনায় তার একটি দৃষ্টান্ত। প্রায় ১ হাজার এমএলএসএস ও বুক সর্টার পদের বিপরীতে ২০১৭ সালে মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন প্রায় চার হাজার জন। এই তরুণেরা বছরের পর বছর একটি চাকরির অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। সবচেয়ে পরিহাস হলো, অনেক আগে থেকে মাস্টাররোলে কর্মরতরাও ওই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তাঁরাও ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে মৌখিক পরীক্ষার ফলের অপেক্ষায় আছেন। আর শিক্ষা অধিদপ্তর যথারীতি অজুহাত খাড়া করেছে যে আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকার কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। সংশ্লিষ্ট একটি রিটের আদেশে আমরা দেখি, আগে দেওয়া স্থগিতাদেশের মেয়াদ আগামী নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছেন হাইকোর্ট। কিন্তু অনুসন্ধান করেও আমরা যা জানতে পারিনি সেটা হলো, এ বিষয়ে সরকারি নীতি কী। গত বছর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর আপিল বিভাগের রায় সূত্রেই ৩৩ জনের আত্তীকরণ করেছে। এতে স্পষ্ট যে তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।

আমরা আশা করব, সরকার অবিলম্বে চাকরিনীতি তৈরি করে ২০১৭ সালের পরীক্ষার ফল প্রকাশ সাপেক্ষে নির্বাচিতদের চাকরি এবং আত্তীকরণে যথাযথ ভূমিকা নেবে। তরুণ বেকারের সংখ্যা গত সাত বছরে দ্বিগুণ (প্রায় ২৭ লাখ) বাড়ার দেশে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে এ রকম গোলমেলে পরিস্থিতি তৈরির জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।