শরীয়তপুর বিআরটিএতে ঘুষ

একসময় কলেরা–গুটিবসন্তে শত শত মানুষ মারা যেত। সেসব মহামারি এখন আর নেই। তবে এখনো বাংলাদেশে প্রচুর মানুষ অকালে মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়; এটা এতটাই বেড়েছে যে অনেকে সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে গিয়ে একে মহামারির সঙ্গে তুলনা করেন।

এই গুরুতর জাতীয় সমস্যাটি সমাধানের বিষয়ে অনেক আলোচনা হয়, অনেক আশ্বাস উচ্চারিত হয়। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু প্রতিদিন ঘটছে। মূলত দুটি কারণে এসব সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এক. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; দুই. অদক্ষ ও অপ্রশিক্ষিত চালক। যানবাহনের ফিটনেস যাচাই করে ছাড়পত্র ও চালকের যোগ্যতা যাচাই করে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এ ক্ষেত্রে বিআরটিএর কর্মকর্তাদের অনিয়মের অভিযোগ প্রায়ই উচ্চারিত হয়।

সর্বশেষ বিআরটিএর শরীয়তপুর কার্যালয়ের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গ্রাহকেরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করে বলেছেন, ঘুষ না দিলে তাঁরা যানবাহন ও মোটরসাইকেল নিবন্ধন, যানবাহনের রুট পারমিট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স পান না। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য নির্ধারিত ফির চেয়ে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। মোটরসাইকেল নিবন্ধনের জন্য বাড়তি নেওয়া হচ্ছে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। গ্রাহকদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর বিআরটিএর একজন খণ্ডকালীন কর্মচারীকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

বিআরটিএর মতো জনগুরুত্বসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি হলে এর নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি জনগণের ওপর গিয়ে পড়ে। এখানে দুর্নীতি হলে দেখা যাবে, কর্মকর্তারা ঘুষ নিয়ে এমন যানবাহনের ছাড়পত্র দেবেন, যেগুলোর ফিটনেস নেই। যানবাহন চালানোর প্রশিক্ষণ ও পর্যাপ্ত যোগ্যতা–দক্ষতা নেই এমন ব্যক্তিকে ঘুষের বিনিময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হলে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়তেই থাকবে। বাস্তবে সেটাই হচ্ছে। সে কারণেই সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছে না।

বিআরটিএর শরীয়তপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা অত্যন্ত গুরুতর। এর আইনি প্রতিকার করার জন্য প্রথমে তদন্ত চালাতে হবে, তারপর প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ অবশ্যই নিতে হবে। সব সরকারি প্রতিষ্ঠানেই ঘুষ–দুর্নীতি অপরাধ, বিআরটিএর ক্ষেত্রে এই অপরাধ বিশেষভাবে বিপজ্জনক। কেননা, এভাবে অদক্ষ লোকজনকে যানবাহনের ড্রাইভিং লাইসেন্স দিলে বস্তুত তাঁদের সড়ক–মহাসড়কে মানুষ মারার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। শুধু শরীয়তপুরে নয়, বিআরটিএর কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ অন্যান্য কার্যালয়ের বিরুদ্ধেও অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সবখানেই এসব বন্ধ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।