কেঁচো সারে স্বাবলম্বী নারী

শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামের নারীদের কেঁচো সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হওয়ার খবরটি আমাদের আশাবাদী করেছে। কেঁচো সার উৎপাদন করে এই জেলার নারীরা যে শুধু স্বাবলম্বী হচ্ছেন তা নয়, পাশাপাশি বেশি ফসল উৎপাদনেও তাঁরা ভূমিকা রাখছেন।

বুধবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, কৃষিপ্রধান জেলা শরীয়তপুরে বাণিজ্যিকভাবে নানা জাতের সবজি ও ফলের আবাদ করেন কৃষকেরা। আগে এসব ফসলে শুধু রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হতো। কয়েক বছর আগে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার কমানোর উদ্যোগ নেয় কৃষি বিভাগ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা এসডিএসের উদ্যোগে জাজিরা, নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের নারী উদ্যোক্তারা কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। এতে করে তাঁরা নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় সারের দামও সবার নাগালের মধ্যে রাখা যাচ্ছে।

আমরা জানি, বেশি ফসল উৎপাদনের জন্য জমিতে সার প্রয়োগ করা হয়। গত শতকের আশির দশক থেকে দেশে রাসায়নিক সারের প্রয়োগ লক্ষণীয় হারে বাড়তে শুরু করে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ওই দশকের মাঝামাঝি সময়ে সারা দেশে রাসায়নিক সারের প্রয়োগ প্রায় ১৩ লাখ টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৯৪-৯৫ সালে সাড়ে ২৬ লাখ টন এবং ২০১৪-১৫ সালে ৪৮ লাখ টনের কাছাকাছি পৌঁছে যায়।

কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কৃষিকাজে ক্রমাগত রাসায়নিক সার ব্যবহারে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায় এবং ফসলের স্বাদের ওপর এর প্রভাব পড়ে। তা ছাড়া মানবদেহের ওপর রাসায়নিক সার দেওয়া ফসলের ক্ষতিকর দিক রয়েছে। অন্যদিকে দেখা যায় যে জৈব সার ও সবুজ সার ব্যবহারের পর জমিতে ভালো ফসল উৎপাদন হচ্ছে। কেঁচো সার সে রকমই একটি জৈব সার। এই সারে রয়েছে কেঁচোর মল, প্রচুর পরিমাণে হিউমাস ও নানা রকম পুষ্টি উপাদান। এখন দেশের কৃষকদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই সার।

শুধু শরীয়তপুরে নয়, দেশের অনেক স্থানেই এই কেঁচো সার উৎপাদন করে নারীদের পাশাপাশি পুরুষেরাও স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং হচ্ছেন। কৃষকেরাও জমিতে কেঁচো সার ব্যবহার করে ভালো ফসল উৎপাদন করতে পারছেন। তবে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, কেউ সার তৈরি করলেও শুধু যোগাযোগের অভাবে বিক্রি করতে পারছেন না। আবার কৃষকের কাছে এই সারের চাহিদা থাকলেও কোথায় তা পাওয়া যায়, সেই তথ্য না থাকায় তিনি তা ব্যবহার করতে পারছেন না। এখানে সরকারের দায়িত্ব আছে। কেঁচো সারের উপকারিতা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন ও প্রয়োজনীয় তথ্য সহজলভ্য করতে হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে।