কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুতের ভুল!

টাঙ্গাইলের দরিদ্র পাটকলশ্রমিক জাহালম ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ না নিয়ে প্রায় তিন বছর কারাগারে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা, ঋণগ্রহীতা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তাঁর ওপর এই অন্যায় করা হয়েছিল, এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।

জাহালমের ঘটনা নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড় হওয়ার পর ধারণা করা গিয়েছিল, এ রকম জালিয়াতির ঘটনা আর ঘটবে না। কিন্তু কুমিল্লার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মামলায় মুরাদনগর উপজেলার দিনমজুর আবদুল মতিনকে কারাগারে নেওয়া হয়েছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে। যে ব্যক্তির বাড়িতে বিদ্যুৎ-সংযোগ নেই, মিটার নেই, সেই ব্যক্তিকেই বিলখেলাপি বানিয়েছে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।

ঘটনা হলো, চার বছর আগে মোচাগড়া গ্রামের ২৫৬টি পরিবার বিদ্যুৎ-সংযোগের জন্য কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর কাছে আবেদন করে। আবেদনকারীদের মধ্যে মতিনের নামও ছিল। গ্রামের দুই ব্যক্তি তখন সংযোগ বাবদ প্রতিটি পরিবার থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার করে টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু মতিন পুরো টাকা দিতে না পারায় সংযোগ পাননি। ২০১৫ সালের ২২ মার্চ সমিতি মতিনের নামে সংযোগ দেয় সফিকুল ইসলাম নামের অন্য এক ব্যক্তির বাড়িতে, সেই বাড়িতে তারা মিটারও বসায়। সফিকুল বিল পরিশোধে ব্যর্থ হলে সমিতি তাঁর বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে এবং তাঁর বিরুদ্ধে ১৭ মাসের বকেয়া বিল আদায়ের জন্য মামলা করে।

এই প্রেক্ষাপটে গত মঙ্গলবার পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় নির্দোষ আবদুল মতিনকে। পরদিন তাঁকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক কারাগারে তাঁকে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে বিষয়টি জানাজানি হলে কুমিল্লায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয় এবং কুমিল্লা ব্লাস্টের সহায়তায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি জেলখানা থেকে ছাড়া পান। তবে সে জন্য সফিকুলের কাছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সমুদয় পাওনা তাঁকে শোধ করতে হয়েছে। সমিতি অবশ্য বৃহস্পতিবার মতিনের বাড়িতে বিদ্যুৎ–সংযোগ দিয়ে তাদের ‘ভুল সংশোধন’ করেছে। কিন্তু আমরা মনে করি, এটি যথেষ্ট নয়। মতিনের যে হয়রানি ও সম্মানহানি হলো, সে জন্য তাঁকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণও দিতে হবে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের জেলা সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের কমিটি করা হলেও গতকাল পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি।

কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এই কাজকে নিছক ভুল বলে চালালেও সেটি গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারি কাজে প্রত্যেক নাগরিকের ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র ব্যবহার বাধ্যতামূলক। এসব জেনেও পল্লী বিদ্যুৎ অফিস কীভাবে মতিনের নামের সংযোগ সফিকুলের বাড়িতে দিল, সেই রহস্য বের করতে হবে।