সংকটে ২৭৮টি পৌরসভা

দেশের ৮৫ শতাংশ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না, এটি শুধু সংশ্লিষ্ট পৌরসভার সমস্যা নয়, স্থানীয় সরকারব্যবস্থারও সংকট বটে। ৩২৭টি পৌরসভার মধ্যে মাত্র ৪৯টি পৌরসভায় বেতন-ভাতা নিয়মিত হচ্ছে। ২৭৮টি পৌরসভায় ২ থেকে ৬৫ মাস পর্যন্ত বেতন-ভাতা বকেয়া পড়ায় সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন।

দেশের পৌরসভাগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৩৫ হাজার ১৩৪ জন। এর মধ্যে স্থায়ী কর্মী ১২ হাজার ৬৯৬ জন। বাকিরা চুক্তিভিত্তিক কর্মী। সরকার চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অনুন্নয়ন বাজেটের আওতায় পৌরসভাগুলোর বেতন-ভাতা খাতে ১৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছে, যা চাহিদার ১ শতাংশেরও কম।

স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯-এর ৫ ধারায় পৌরসভাকে সরকারের একটি প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আইনের ৯১ (৪-এর ক) ধারায় বলা আছে, পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা এর তহবিল থেকে দিতে হবে। তবে স্থানীয় সরকারের আরেক প্রশাসনিক ইউনিট ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে পরিষদের নিজস্ব আয় থেকে বেতনের ২৫ শতাংশ অর্থ জোগান দেওয়ার বিধান রয়েছে। সরকারি বরাদ্দ বাকি ৭৫ শতাংশ। একই ধরনের প্রশাসনিক ইউনিট হলেও বেতন-ভাতার ক্ষেত্রে বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এখানে গ্লাসের অর্ধেক পূর্ণ আর অর্ধেক খালি নয়, অধিকাংশ খালি। এটি কে পূরণ করবে, সেটি এখনো অমীমাংসিত।

পূর্বাপর সরকারগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যথেচ্ছ পৌরসভা গঠন করলেও সেগুলো কীভাবে চলবে, তা নির্ধারিত নয়। পৌরসভার কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ পৌরসভায় ন্যূনতম পৌর সুযোগ-সুবিধা তথা পয়ঃপ্রণালি, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। হাটবাজার থেকে কিংবা গৃহকর আদায়ের সুযোগও কম। এসব পৌর এলাকায় শিল্পকারখানাও তেমন নেই, যা থেকে আয় আসতে পারে। আর আয় না হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন–ভাতাই বা কীভাবে শোধ করবে?

অতএব, রাজনৈতিক কারণে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা না থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রী-এমপি ও অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তির সুপারিশে যেসব পৌরসভা করা হয়েছে, অথচ ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা নেই, সেসব পৌরসভার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে। শুধু পৌরসভা নাম রক্ষার জন্য সরকারি কোষাগার থেকে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ করারও যুক্তি নেই। যেসব সেবা উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদ দিতে পারে, সেসব সেবার জন্য পৌরসভার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।

তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে তারা একটি কমিশন গঠন করে সুপারিশ নিতে পারে। তার আগে পৌরসভার কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে।