শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলা

রোববার শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোসহ তিনটি শহরে আটটি সন্ত্রাসী হামলায় প্রায় ৩০০ মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু এবং প্রায় ৫০০ জনের আহত হওয়ার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা নিহত ব্যক্তিদের আত্মার শান্তি কামনা করছি, আহতদের সুচিকিৎসা ও দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি এবং হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা, সহমর্মিতা ও সংহতি প্রকাশ করছি। এই মর্মান্তুদ ঘটনার গভীর শোক কাটিয়ে ওঠা এবং সন্ত্রাস মোকাবিলা করে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে শ্রীলঙ্কার জনগণের পাশে রয়েছে বাংলাদেশ।

হামলা চালানো হয়েছে তিনটি পাঁচ তারকা হোটেলে এবং তিনটি ক্যাথলিক গির্জায়। শ্রীলঙ্কার সরকারি কর্তৃপক্ষ দুটি হামলাকে আত্মঘাতী হামলা হিসেবে নিশ্চিত করেছে, অন্যগুলোও আত্মঘাতী হামলা ছিল কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে। দিনটি ছিল খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ইস্টার সানডে; কিন্তু যাঁরা হতাহত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ আছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৬ জনকে বিদেশি নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে একজন বাংলাদেশিও আছে। নিহত ও আহত হয়েছেন শিশু ও নারীসহ সব বয়সের মানুষ। সুতরাং এসব হামলার লক্ষ্যবস্তু আপাতদৃষ্টিতে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী মানুষ হলেও চূড়ান্ত বিচারে এগুলো জাতি–ধর্ম–দেশনির্বিশেষে বিশ্বমানবতার বিরুদ্ধে পৈশাচিক আক্রমণ। এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এসব হামলার দায় স্বীকার করেনি এবং শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ কোনো সন্দেহভাজন গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ করেনি। হামলাকারী যারাই হোক না কেন, আমরা বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি ধিক্কার জানাই। আমরা আশা করি, শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ হামলাকারীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হবে এবং এ কাজে আন্তর্জাতিক বিশ্ব তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াবে।

শ্রীলঙ্কার তিন দশকের জাতিগত সহিংসতার অবসান ঘটেছে প্রায় এক দশক আগে। দেশটির জনসাধারণ স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় আশাবাদী হলেও সেখানে কিছু রাজনৈতিক টানাপোড়েন এখনো বিদ্যমান। কিন্তু এত বড় সন্ত্রাসী হামলা, যা শান্তি ও স্থিতিশীলতার আশাবাদের ওপর এক প্রচণ্ড আঘাত, তা এসেছে ভীষণ অপ্রত্যাশিতভাবে। হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে গেছেন এমন এক ব্যক্তি লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকার কাছে মন্তব্য করেছেন, ‘আমি ভেবেছিলাম শ্রীলঙ্কায় এই সমস্ত সহিংসতা পেছনে ফেলে এসেছি।’ এটা স্পষ্ট যে এই হামলার ফলে স্থায়ী শান্তির জন্য শ্রীলঙ্কার জনসাধারণের এই সাধারণ আকাঙ্ক্ষা বড় ধাক্কা খেল।

শুধু শ্রীলঙ্কার জন্য নয়, দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিকামী জনসাধারণের জন্যও এটা একটা বিরাট আঘাত। দেশি ও আন্তর্জাতিক নানা সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর মানবতাবিরোধী সন্ত্রাসী তৎপরতায় দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও নিরাপত্তা বিভিন্ন সময়ে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। পাকিস্তান, আফগানিস্তান তো বটেই, ভারত, এমনকি বাংলাদেশেও আত্মঘাতী সন্ত্রাসী হামলায় অনেক নিরীহ সাধারণ মানুষের প্রাণ হারানোর মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছে। শ্রীলঙ্কার রোববারের হামলাগুলোকে সুপরিকল্পিত ও সমন্বিত হামলা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে; বলা হচ্ছে আটটি হামলার পেছনেই একটি সংগঠিত গোষ্ঠীর হাত থাকতে পারে। শ্রীলঙ্কার মন্ত্রী হ্যারিন ফেরনান্দো টুইটারে লিখেছেন, ১১ এপ্রিল শ্রীলঙ্কান পুলিশের এক স্মারকপত্রে সতর্ক করা হয়েছিল যে, ‘ন্যাশনাল তাওহিদ জামাত’ নামের একটি গোষ্ঠী সে দেশের ক্যাথলিক গির্জায় ও ভারতীয় হাইকমিশনে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছে। প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে উদ্ধৃত করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার সরকারি কর্তৃপক্ষ সন্ত্রাসী হামলার ব্যাপারে সতর্ক সংকেত পেয়েছিল, কিন্তু ‘সে বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হয়নি’।

নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি বা ব্যর্থতা ছিল কি না, কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই সে বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার ক্ষেত্রে
সতর্কতা ও নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়টি অন্য সব দেশের জন্যই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।