উপকূলে ভুট্টা চাষে সম্ভাবনা

লবণাক্ত জমিতে ভুট্টা চাষে সাফল্যের সুখবর পাওয়া গেল। জনসংখ্যার চাপ ও জীবনযাপনের নানা প্রয়োজনে বাংলাদেশের আবাদি জমি দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে। এ অবস্থায় উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত মাটি, যা আমন ধান ফলানোর পরে অনাবাদি পড়ে থাকত, সেখানে আউশ ধানসহ নানা ধরনের ফসল ফলানো শুরু হয়েছে। ফসলবৈচিত্র্যের এই উদ্যোগে যুক্ত হলো ভুট্টা।

খুলনার মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা প্রথমে শুধু ‘ডিবলিং’ (বীজ পোঁতা) পদ্ধতিতে ভুট্টা চাষের পরীক্ষায় সাফল্য লাভ করেছেন। এবার সফলতা এল ট্রান্সপ্লান্টিং (চারা স্থানান্তর) পদ্ধতিতে। দক্ষিণের লবণাক্ত উপকূলীয় জমিতে উভয় পদ্ধতিতেই ভুট্টা চাষের ব্যাপক সাফল্যের সম্ভাবনা বেশ আশাব্যঞ্জক একটি বিষয়।

এখন এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে বিশেষভাবে উদ্যোগী হতে হবে। তাদের উচিত হবে, লবণাক্ত অঞ্চলের জমির মালিক ও চাষিদের কাছে অবিলম্বে ছুটে যাওয়া। তাঁদের কাছে এই খবর পৌঁছে দেওয়া যে লবণাক্ত জমিতেই ভুট্টা চাষের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

সরকার গুরুত্বের সঙ্গে এখনই যা করতে পারে তা হলো, গোটা উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত জমির পরিমাণ এবং তাতে যাতে দ্রুত ভুট্টার আবাদ শুরু হয়, সেটা নিশ্চিত করতে সব রকম পদক্ষেপ নেওয়া। মৃত্তিকা বিভাগের লোকবল অপ্রতুল, তারা এ বিষয়ে কোনো সমীক্ষা চালাতে পারবে না। তারা যা করার তা করে দিয়েছে।

আসন্ন মৌসুম সামনে রেখে সরকারের এখনই যা করণীয় সেটা হলো, পটুয়াখালী থেকে শুরু করে সাতক্ষীরা পর্যন্ত গোটা উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকদের লবণাক্ত জমিতে ভুট্টা চাষের বিষয়ে সচেতন করতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলের সাড়ে ২৮ লাখ হেক্টর আবাদযোগ্য জমির ১০ লাখের বেশি হেক্টরে বিভিন্ন মাত্রায় লবণাক্ততা বিদ্যমান। অতি লবণাক্ততায় অন্তত চার লাখ হেক্টর জমি বছরের চার মাস অনাবাদি পড়ে থাকে। এতে যে আবাদ সম্ভব তা চাষিরা এতকাল ভাবেননি। এ জন্য প্রতিটি উপকূলীয় জেলা এবং প্রতিটি উপজেলা প্রশাসনকে এ–সংক্রান্ত প্রচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করলে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব হবে। প্রতিটি উপকূলীয় উপজেলায় আসন্ন মৌসুমে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিতে হবে। কৃষকদের কাছে বীজ পৌঁছানোর নিশ্চয়তা এবং তাঁদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

চাষিদের উৎসাহিত করতে ভুট্টার বীজ সহজলভ্য করা একান্ত প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, দিনাজপুরে যে ভুট্টা ও গম গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে, তাকে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকদের ভুট্টার বীজ সরবরাহ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া দরিদ্র চাষিদের জন্য স্বল্প দামে ভুট্টার বীজের ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। দক্ষিণাঞ্চলে ভুট্টা চাষের জন্য কৃষিঋণেরও ব্যবস্থা করা যেতে পারে।