সাড়ম্বরে স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০ থেকে ২৬ এপ্রিল প্রথমবারের মতো স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ পালন করেছে, যদিও স্বাস্থ্যসেবা পুরো বছরের বিষয়। সারা বছরই রোগীদের সেবা পেতে হবে। এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্দেশ্য থাকে সংশ্লিষ্টদের কার্যক্রম সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবহিত করা, যাতে প্রয়োজনের সময় তাঁরা উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিতে পারেন।

তবে এবার স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহের আরেকটি উদ্দেশ্য আছে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ভাষায়, জাতিসংঘ ঘোষিত ২০৩০
সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।

স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর জন্য সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়নের নানা কর্মসূচি নিয়েছে, যার মধ্যে আছে প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, নতুন নতুন মেডিকেল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট, পোস্টগ্র্যাজুয়েট নার্সিং ইনস্টিটিউটসহ অন্যান্য চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ। কিন্তু শুধু চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়লেই হবে না, সেগুলো পরিচালনার জন্য যোগ্য ও অভিজ্ঞ জনবলও থাকতে হবে।

চিকিৎসাসেবা এমন একটি কার্যক্রম, যার সঙ্গে রোগীর বাঁচা-মরার প্রশ্ন জড়িত। ফলে এখানে ফাঁকিবাজির সুযোগ নেই। উদ্বেগের বিষয় হলো শুধু বেসরকারি মেডিকেল কলেজ নয়, নতুন সরকারি কলেজেও দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের যথেষ্ট অভাব আছে। মেডিকেল কলেজে অভিজ্ঞ শিক্ষক না থাকলে মানসম্পন্ন চিকিৎসক তৈরি হবে না। আর মানসম্পন্ন চিকিৎসক তৈরি না হলে স্বাস্থ্যসেবার মানও বাড়বে না।

মন্ত্রণালয় লাখ লাখ টাকা খরচ করে যে স্বাস্থ্যসেবা পালন করেছে, তা নিছক আনুষ্ঠানিকতার বিষয় নয়। স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ উপলক্ষে কোনো কোনো হাসপাতাল যেমন রোগীবান্ধব কর্মসূচি নিয়েছে, আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ফটোসেশনের মধ্য দিয়ে তাদের কর্মসূচি শেষ করেছে। দুটোর মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করার আগে নিজের সচেতন হওয়া অধিক জরুরি বলে মনে করি। দেশবাসী নিশ্চয়ই এই কর্মসূচির মাধ্যমে দেখতে চাইবে যে স্বাস্থ্যসেবার মান কিছুটা বেড়েছে, চিকিৎসক ও নার্সদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এসেছে। কিছু কিছু উদাহরণ আমাদের উৎসাহিত করে। সেবা সপ্তাহে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আসা রোগী ও তাঁদের অভিভাবকদের অভিজ্ঞতা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। সারা বছরই যেন তারা এ ধরনের সেবা পান, সেই প্রত্যাশা করেছেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও রোগী ও অভিভাবকদের মধ্যে এই আশাবাদ জাগাতে পেরেছে, এটাও কম নয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ জন্য ধন্যবাদ পেতে পারেন। তবে সবাইকে মনে রাখতে হবে স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহের বিষয় নয়, সারা বছরই সেবার মান ধরে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে এই খাতের দুর্নীতি ও অনিয়মগুলো কমাতে হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় পাঁচ বছর মেয়াদি ‘চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি কর্মসূচি ২০১৭-২০২২’ হাতে নিয়েছে, তা সফল করতে হলে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রত্যেককে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশে যে কয়টি সরকারি খাত দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে, পরিচিত তার মধ্যে স্বাস্থ্য খাত অন্যতম। দুর্নীতি নির্মূল করতে না পারলেও মাত্রা কমিয়ে আনতে পারলে স্বাস্থ্যসেবার মান অনেকটা বাড়বে।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের বদলি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে বলে যে খবর বের হয়েছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হলে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে একযোগেই কাজ করতে হবে। নিয়োগ-বদলি হবে আইনমাফিক। ফলে এ নিয়ে কারও কর্তৃত্ব দেখানো কিংবা কারও অভিমান করার কোনো সুযোগ নেই।