মৌলভীবাজারের মনু খনন

তিনটি উপজেলার লাইফ লাইন মনু নদের খনন যথাসময়ে না হওয়া বিষয়ে সন্দেহ-সংশয় ছিলই। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে খননকাজ শুরুর কথা থাকলেও তার শুরু হয় অক্টোবরে। বর্ষার মনু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদরের নদ সন্নিহিত কয়েক লাখ মানুষের জীবনের দুঃখকষ্টের প্রতীক হয়ে উঠেছে। কারণ প্রতিবছর বন্যায় এই তিন উপজেলার কিছু পরিবারকে বানভাসি হতেই হয়। গতবছরও বহু মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদ খনন না হওয়ায় মানুষ বন্যার কথা ভেবে পুনরায় ক্ষতির আশঙ্কা করছে।

গত জানুয়ারিতে কাজের অগ্রগতি ছিল ২ শতাংশের নিচে, ফেব্রুয়ারিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হলো, আর এখন জানা গেল অগ্রগতি মাত্র ২৬ শতাংশে উন্নীত। বিআইডব্লিউটিএকে এই ব্যর্থতার দায় নিতে হবে। তারা বলছে, গত মে মাসে কাজ শেষের কথা থাকলেও নদে পানি ও স্রোত দুটোই বেড়েছে। প্রশ্ন হলো, এমন কিছু কি ঘটেছে, যা প্রকল্প তৈরির সময় চিন্তা করা সম্ভব হয়নি। মনু নদের নাব্যতা একদা এতটাই গভীর ছিল যে, বিদেশি জাহাজও এখানে নোঙর করেছে। আশির দশকের গোড়ায় যখন মৌলভীবাজারের মাতারকাপনে সেচের জন্য ব্যারেজ স্থাপন করা হয়েছিল, তখন কি প্রকল্প প্রণেতারা এর সম্ভাব্য ক্ষতি বা তার প্রভাব ভবিষ্যতে কী হবে, তা যাচাই করেছিলেন? কারণ, মনু নদের উজানে ও ভাটিতে দ্রুত চর পড়ার জন্য এই ব্যারাজকেও দায়ী করা হয়।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আছে টানা এক দশকের বেশি। সুতরাং সরকার পরিবর্তনের কারণে প্রকল্প প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন লাল ফিতার দৌরাত্ম্য
কবলিত হওয়ার দাবি করা যাবে না। সুতরাং এটা স্বাভাবিক প্রত্যাশা যে, এই প্রকল্পটির বাস্তবায়নগত ব্যর্থতার একটা জবাবদিহি দরকার। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন বা বাস্তবায়নকারী সংস্থার তরফে বিষয়টির একটি ব্যাখ্যা দরকার। আমরা এটা জানতে উদ্‌গ্রীব যে, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা কী কী বিষয় বিবেচনায় নিয়ে নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। তদন্ত হলে এটা বেরিয়ে আসবে যে, গলদটা ঠিক কোথায় ছিল। হয় পরিকল্পনায় ত্রুটি ছিল, পরিকল্পনাকারীরা যেনতেনভাবে সময়সীমা নির্দিষ্ট করেছেন, এটা ঘটলে তারও জবাবদিহি দরকার। আবার পরিকল্পনা ঠিক থাকলে কী এমন অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটল, যাতে বেঁধে দেওয়া সময়সীমা একবার বাড়ানোর পরেও প্রকল্পের কাজ প্রায় ৭৫ ভাগই বাকি থাকে। এ বিষয়ে সুষ্ঠু কোনো জবাবদিহি ছাড়াই ঠিকাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সময় যেভাবে বাড়ল, তা গ্রহণযোগ্য নয়।

গোটা সিলেটকে বাঁচাতে সুরমা-কুশিয়ারার খনন দরকার। এটা ঘটলে মনু নদের নাব্যতা সংকট ঘোঁচাতে সহায়ক হবে। সুতরাং সিলেটের নদীশাসন ও ব্যবস্থাপনায় একটি সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার।