ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফর নির্বিঘ্ন হবে তো!

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

গত বছরের জুলাইয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফরের সময় লন্ডনে বিক্ষোভ হয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলেছিলেন। মিছিলের মতো শোভাযাত্রা করেছিলেন। তাঁদের হাতে ট্রাম্পবিরোধী স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড ছিল। আর ছিল বেলুন দিয়ে ‘শিশু ট্রাম্পের’ আদলে বানানো একটি ব্যঙ্গমূর্তি বা বেবি ব্লিম্প। সবকিছু ছাপিয়ে সে সময় এই বেবি ব্লিম্পই হয়ে উঠেছিল প্রতিবাদের কেন্দ্রবিন্দু।

আগামী জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে আবার ট্রাম্প যুক্তরাজ্যে আসছেন। লালগালিচা সংবর্ধনার মাধ্যমে তাঁকে বরণ করা হবে। বিক্ষোভকারীরা সে সময় রাস্তায় নামবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এবার তাঁরা আটঘাট বেঁধে নামবেন। গত বছর সেই বেবি ব্লিম্পের উচ্চতা ছিল ছয় মিটার। এবার সেটি পাঁচ গুণ বড় হবে। ন্যাপি পরা শিশু ট্রাম্প ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছেন—একটি হট এয়ার বেলুনে এমনটাই চিত্রিত করা হবে। এতে বিস্তর খরচ পড়বে। বিক্ষোভ আয়োজকেরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এমন বেলুনমূর্তি বানাতে প্রায় ৭০ হাজার পাউন্ড লেগে যাবে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত সেই বেলুন ওড়ানোর অনুমতি মিলবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য বিক্ষোভ আয়োজকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা রয়ে গেছে। লন্ডনের মেয়রের কার্যালয় এখন পর্যন্ত বলছে, এতে তারা বাধা দেবে না। তবে শেষমেশ তা ঠেকিয়ে দেওয়া হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। শুধু যে অরাজনৈতিক লোকজনই ট্রাম্পের এই সফরের বিরোধিতা করছেন তা নয়, বিরোধী দলের এমপিরাও এর ঘোর বিরোধী। ট্রাম্পের এই সফর যেন বাতিল করা হয়, সে জন্য তাঁরা বিশেষ পিটিশন করবেন বলেও জানিয়েছেন। এমনিতেই বর্ণবাদী, নারীবিদ্বেষী ও মিথ্যা কথা বলার জন্য ট্রাম্পের ওপর মানবাধিকারকর্মীরা অনেক আগে থেকে খেপে আছেন। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে গত বছর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে ট্রাম্পের ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণের বিষয়টি এবার সামনে চলে এসেছে। ট্রাম্পবিরোধীরা বলে আসছেন, গত বছর যুক্তরাজ্য সফরের প্রথম দিনেই রানিকে অন্তত দুবার অসম্মান করেছেন। সে সময়ই যুক্তরাজ্যের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা ট্রাম্পের ‘ঔদ্ধত্যে’ বিস্ময় ও নিন্দা প্রকাশ করেছিলেন। কারণ, তাঁরা রানিকে সর্বোচ্চ সম্মানের চোখে দেখে থাকেন।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ, উইন্ডসর ক্যাসেলে চা পানের জন্য ট্রাম্প রানিকে অপেক্ষায় রেখেছিলেন। সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসেলে রানির সঙ্গে চা পানের কথা ছিল ট্রাম্পের। কিন্তু দেখা গেল, ট্রাম্প নির্ধারিত সময়ে উইন্ডসর ক্যাসেলে পৌঁছাননি। রানি ক্যাসেলের গেটে ট্রাম্পের অপেক্ষায় প্রায় ১০ মিনিট দাঁড়িয়েছিলেন। অনেকেই মনে করেন, ট্রাম্প ইচ্ছা করেই রানিকে অপেক্ষমাণ রেখেছিলেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি দেখাতে চেয়েছেন, তিনি ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থা ও ঐতিহ্যকে পাত্তা দিতে রাজি নন।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযোগ, তিনি ওই দিন রানির সঙ্গে না হেঁটে তাঁকে পেছনে ফেলে সামনে গিয়ে হেঁটেছেন। এ ধরনের মুহূর্তে দুই দেশের প্রধানেরা পাশাপাশি হাঁটেন। এটাই সাধারণ ঐতিহ্য। ট্রাম্পের এ আচরণকে অনেকেই সে সময় মেনে নিতে পারেননি। এটি খুব সহজভাবে নেওয়ার মতো ঘটনাও নয়।

এবার তিন দিনের সফরে আসছেন ট্রাম্প। ৩ জুন তাঁর আসার কথা। এই সফরে ট্রাম্প রানির সঙ্গে ভোজসভায় অংশ নেবেন, প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের সঙ্গে ডাউনিং স্ট্রিটে বৈঠক করবেন এবং পোর্টসমাউথে ডি-ডের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। প্রতিবাদকারীরা বলছেন, গত বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতার পর আবার ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মে বাজে কাজ করেছেন। এ কথা সত্য যে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে ট্রাম্পের অনেক বক্তব্য ও আচরণ যুক্তরাজ্যের ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে আঘাত করেছে। এটি ব্রিটিশ নাগরিকদের ক্ষুব্ধ করেছে। এ ছাড়া ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধিতা ও শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদের প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থন উদারপন্থী ও মানবাধিকারকর্মীদের তীব্রভাবে সংক্ষুব্ধ করেছে।

মানবাধিকার সংগঠন ওয়ার অন ওয়ান্টের নির্বাহী পরিচালক এবং ‘স্টপ ট্রাম্প কোয়ালিশন’ আন্দোলন কমিটির সদস্য আসাদ রেহমানের কথায় মনে হচ্ছে, ট্রাম্প লন্ডনে এলে বেশ বড় ধরনের বিক্ষোভ হবে। রেহমান মনে করছেন, তিন লাখের বেশি বিক্ষোভকারী লন্ডনের রাস্তায় নামবেন। এই বিক্ষোভ শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের বিরুদ্ধে যাবে বলেই মনে হচ্ছে।

থেরেসা মে অবশ্য ট্রাম্পের সফরের সাফাই গেয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ঐতিহাসিকভাবে মৈত্রীর সম্পর্ক। এই সফরে সেই বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হবে। কিন্তু সে বক্তব্যে যুক্তরাজ্যবাসীর কতটুকু আস্থা আছে, তা আগামী জুনে স্পষ্ট হবে।

দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনূদিত

ম্যাথিউ উইভার গার্ডিয়ান পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক