প্রাণবন্ত ইফতার আনন্দময় সুন্নত

মুমিনগণ ইবাদতে আনন্দ লাভ করেন। মহানবী (সা.) বলেছেন: রোজাদারের জন্য দুটি খুশি। একটি ইফতারের সময়, অপরটি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়। সূর্যাস্তের পর রোজাদার প্রথম যে পানাহারের মাধ্যমে রোজা ছাড়ে, তাকে ইফতার বলে। ইফতার অর্থ ভাঙা বা উপবাস ভঞ্জন করা। ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা উত্তম। ইফতারের আগেই ইফতার সামনে নিয়ে অপেক্ষা করা এবং যথাসময়ে ইফতার করা সুন্নত। ইফতার সামনে নিয়ে যে দোয়া করা হয়, সেই দোয়া আল্লাহ কবুল করেন।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রোজাদারের দোয়া আল্লাহর নিকট এতই আকর্ষণীয় যে আল্লাহ তাআলা রমাদানের সময় ফেরেশতাদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন, ‘রমাদানে তোমাদের পূর্বের দায়িত্ব মওকুফ করা হলো এবং নতুন দায়িত্বের আদেশ করা হলো, তা হলো আমার রোজাদার বান্দাগণ যখন কোনো দোয়া মোনাজাত করবে, তখন তোমরা আমিন! আমিন! বলতে থাকবে।’

রমাদানের গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতসমূহের অন্যতম হলো ইফতার। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন: আমার বান্দাদের মধ্যে তারা আমার বেশি প্রিয়, যারা দ্রুত ইফতার করে। (তিরমিজি, আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৬০, পৃষ্ঠা: ১৩১)।

প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন: যখন রাত সেদিক থেকে ঘনিয়ে আসে ও দিন এদিক থেকে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়, তখন রোজাদার ইফতার করবে। (বুখারি, সওম অধ্যায়, হাদিস: ১৮৩০)। হাদিসে আরও আছে: সে পর্যন্ত দ্বীন ইসলাম বিজয়ী থাকবে, যে পর্যন্ত মানুষ শিগগির ইফতার করবে। কেননা ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা বিলম্বে ইফতার করত। ইফতার শুধু খাদ্য গ্রহণের নাম নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। হজরত সাহল ইবনে সাআদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: যত দিন লোকেরা ওয়াক্ত হওয়ামাত্র ইফতার করবে, তত দিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে। (বুখারি, সওম অধ্যায়, হাদিস: ১৮৩৩)।

মিষ্টান্ন, ফল, বিশেষত খেজুর দ্বারা ইফতার করা সুন্নত; যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে যেকোনো হালাল খাদ্যবস্তু দ্বারা, এমনকি শুধু পানি দিয়েও ইফতার করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: তোমাদের কেউ রোজা রাখলে খেজুর দিয়ে যেন ইফতার করে, খেজুর না হলে পানি দ্বারা; নিশ্চয় পানি পবিত্র। (তিরমিজি ও আবু দাউদ; আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৬২, পৃষ্ঠা: ১৩১-১৩২)।

বিশিষ্ট সাহাবি হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে, ওই রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াব কম করা হবে না। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের অনেকেরই রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন: পানিমিশ্রিত এক কাপ দুধ বা একটি খেজুর অথবা এক ঢোঁক পানি দ্বারাও যদি কেউ কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, তাতেও সেই পরিমাণ সওয়াব দান করবে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তিসহকারে আহার করাবে, আল্লাহ তাআলা তাকে আমার হাউসে কাউসার থেকে এমন পানীয় পান করাবে, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্ব পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত হবে না।

না খেয়ে থাকার নাম রোজা। ক্ষুধার্তদের জঠর জ্বালা অনুভব করা রোজার অন্যতম উদ্দেশ্য। তাই রমাদানে বাহারি ইফতারের চেয়ে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বা সাধারণ মানুষের সঙ্গে ইফতার করা শ্রেয়। নিজেদের ইফতারের পাশাপাশি পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, নিকটজন, গরিব–মিসকিন, দরিদ্র–অসহায়দের ইফতারের বিষয়ে যত্নবান ও সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়।

ইফতার মাহফিল ও ইফতার পার্টি সওয়াবের উদ্দেশ্য ভিন্ন হওয়া অনুচিত। ইফতার অনুষ্ঠানের লক্ষ্য হওয়া উচিত: এক, ইফতার করা ও করানোর মাধ্যমে সওয়াব লাভ করা; দুই, দ্বীনি তালিম; তিন, ইসলামি তাহজিব তমুদ্দুন ও সংস্কৃতির বিকাশ; চার, গরিবদের আর্থিক ও সামাজিক সহযোগিতা করা। বিশুদ্ধ নিয়ত ছাড়া কোনো ইবাদতই কবুল হয় না। হালাল খাদ্য ও হালাল উপার্জন রোজা, নামাজ ও যাবতীয় ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত। তাই ইফতার ও সাহ্‌রিতে বৈধ উপার্জনের হালাল খাবার চাই।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক
[email protected]