সড়ক সংস্কারে গাফিলতি

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর-উলিয়া সড়কের হরকা সেতু এলাকায় বন্যায় ধসে যাওয়া অংশ দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে যে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তার জন্য দায়ী স্রেফ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি।

সোমবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ২০১৭ সালের জুলাইয়ে বন্যায় মাহমুদপুর-উলিয়া সড়কের হরকা সেতু এলাকায় প্রায় ৫০০ মিটার ধসে যায়। ভাঙা অংশে কাঠের একটি সাঁকো ছিল। কিন্তু সম্প্রতি সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় লোকজন সেটি দিয়ে আর চলাচল করতে পারে না। তবে নিচ দিয়ে মাটি কেটে কোনোরকমে যানবাহন চলাচল করছে। তবে প্রায়ই যানবাহন উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। বর্ষায় দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। ভাঙা অংশে অনেক পানি জমে। তখন যানবাহন নিয়ে পারাপার হওয়া যায় না। নৌকায় করে পার হতে হয়। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ চলাচল করে। এতগুলো মানুষের দুর্ভোগ দেখার পরও ধসে যাওয়া অংশটুকু মেরামতে উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

প্রশ্ন হচ্ছে, যাদের এ কাজটি করার কথা, সেই এলজিইডি কী করছে? দীর্ঘদিন ধরে একটি সড়ক এ রকম চলাচলের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে, মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, অথচ তারা নির্বিকার। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম তালুকদারের বক্তব্য হচ্ছে, ওই ভাঙা অংশে একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখনো প্রকল্প তৈরি করা হয়নি। প্রকল্প তৈরি নিয়ে আলোচনা চলছে। তাঁর এমন বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, শিগগিরই সড়কটির সংস্কার হচ্ছে না।

আমাদের দেশে সড়ক-মহাসড়কে সংস্কারকাজে গাফিলতি এখন যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কতিপয় কর্মকর্তার গাফিলতি, দুর্নীতি ও অনিয়ম এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী হলেও এ ব্যাপারে সরকারের কোনো নজরদারি নেই। সড়কে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের বিষয়টিও আজকাল নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ কারণে কমছে সড়কের স্থায়িত্ব। নির্মাণের কয় দিন না যেতেই ভেঙে পড়ছে সড়ক। আর এর ফল ভোগ করতে হয় সাধারণ মানুষকে। কিন্তু এ রকম তো দীর্ঘদিন ধরে চলতে পারে না। মূল সমস্যা হচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি ও শাস্তির ব্যবস্থা না থাকা। কর্তব্যে অবহেলার জন্য যদি তারা শাস্তি পেত, তাহলে দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো এমন বেহাল হতো না। সরকারকে এখন এদিকে নজর দিতে হবে। সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

আমরা চাই জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর-উলিয়া সড়কের ধসে যাওয়া অংশসহ দেশের সব সড়কের সংস্কারকাজ সময়মতো শুরু ও শেষ হোক। দূর হোক জনগণের ভোগান্তি।