রমজান মাসে ওমরাহ পালন

ওমরাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ জিয়ারত করা। শরিয়তের ভাষায় শরিয়ত নির্দেশিত বিশেষ পদ্ধতিতে ইহরামসহ, কাবা শরিফ তাওয়াফ (সাত চক্কর) করা, সাফা-মারওয়া সাই (সাতবার দৌড়ানো) করা এবং মাথা মুড়ানোকে ওমরাহ বলে। হজের পাঁচ দিন (৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ) ছাড়া সারা বছর ৩৬০ দিন ওমরাহ করা যায়। দৈহিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলমানরা হজ ও ওমরাহ পালন করেন। রমজান মাসে একটি ওমরাহ করলে একটি হজ আদায়ের সমান সওয়াব হয়।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাসে ওমরাহ করা আমার কাছে হজ আদায় করার সমতুল্য।’ (সহিহ্ বুখারি: ১৮৬৩)

এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক আনসারি মহিলাকে বললেন, ‘তুমি কেন আমাদের সঙ্গে হজ করতে যাওনি?’ তিনি বললেন, ‘আমাদের পানি বহনকারী দুটি মাত্র উট রয়েছে। একটিতে আমার ছেলের বাবা (স্বামী) ও ছেলে হজ করতে গিয়েছেন, অন্যটি পানি বহনের জন্য আমাদের কাছে রেখে গিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, “রমজান এলে তুমি ওমরাহ করবে। কেননা, এ মাসের ওমরাহ একটি হজের তুল্য।”’

 সহিহ্ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘রমজানে ওমরাহ একটি হজের তুল্য।’ (বোখারি: ১৭৮২, মুসলিম: ১২৫৬, মুসনাদে আহমাদ: ২০২৫)।

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, উম্মে মাকিল (রা.) বলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তো হজ করতে ইচ্ছুক। কিন্তু আমার উটটি দুর্বল।’ তিনি বললেন, ‘তুমি রমজানে ওমরাহ করো। কেননা, রমজানে ওমরাহ (সওয়াব হিসেবে) হজের তুল্য।’ (মুসনাদে আহমাদ: ২৭২৮৫)। ‘হে আল্লাহ আমাদের রমজানে ওমরাহ করার তৌফিক দান করুন।’

এবারের রমজানে যঁারা ওমরাহ করতে গেছেন বা যাচ্ছেন, তাঁরা আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করুন, ‘হে আল্লাহ, আমার ওমরাহকে সহজ করুন, কবুল করুন।’ দেখবেন সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

রমজান মাস ফজিলতের মাস। রমজান মাসের আমলগুলোর সওয়াব অন্যান্য মাসের তুলনায় ৭০ বা তার চেয়ে বেশি।

 মক্কায় মসজিদুল হারামে (কাবা শরিফে) এক রাকাত নামাজ আদায় করলে এক লাখ রাকাতের চেয়ে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। একই সঙ্গে মদিনার মসজিদে নববিতে এক রাকাত নামাজ আদায় করলে বহু গুণ সওয়াব পাওয়া যায়। রমজানে মক্কা বা মদিনায় অবস্থান করে যত খুশি নফল তাওয়াফ করতে পারেন, একই সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, চাশত, তারাবিহ, তাহাজ্জুদ নামাজ, জানাজাসহ অন্যান্য আমল করে অনেক বেশি সওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়।

ওমরাহ পালন করার সুবাদে মক্কায় পবিত্র কাবা শরিফে অবস্থান করে রমজান মাসের আমলগুলো করতে পারেন। এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো। এর বাইরে অনেক আমল করা যায়।

রমজানে ওমরাহ পালন করার সুবাদে মক্কায় পবিত্র কাবা শরিফে বা মদিনার মসজিদে নববিতে অবস্থান করে বিশাল জামাতে সময়মতো নামাজ আদায় করা যায়। কোরআন মজিদে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মোমিনদের জন্য অবশ্যকর্তব্য (সুরা নিসা: ১০৩)।

আল–কোরআনে এসেছে, রমজান মাস এমন যে, তাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য পথপ্রদর্শকরূপে ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনা ও সত্যাসত্যের পার্থক্য নির্ণয়কারী হিসেবে। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)।

ওমরাহ পালন করার সুবাদে মক্কায় পবিত্র কাবা শরিফে বা মদিনার মসজিদে নববিতে অবস্থান করে কোরআন তিলাওয়াত করা, সহিভাবে শেখা ও অপরকে শেখাতে পারবেন।

ওমরাহ পালন করার সুবাদে মক্কায় পবিত্র কাবা শরিফে বা মদিনার মসজিদে নববিতে ইতিকাফ করতে পারবেন। ইতিকাফ অর্থ অবস্থান করা। অর্থাৎ মানুষের থেকে পৃথক হয়ে সালাত, সিয়াম, কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া, ইস্তিগফার ও অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্যে একাকী কিছু সময় যাপন করা। এ ইবাদতের মর্যাদা অনেক।

ওমরাহর প্যাকেজ ৭ দিন, ১৫ দিন, ২১ দিনের হয়ে থাকে, চাইলে দিন কম–বেশি হয়ে থাকে। ১৫ দিন রোজার মাস মক্কা-মদিনায় অবস্থান করলে অনেক আমল করা যায়। যাঁরা এবার ওমরাহ বা হজ পালন করবেন, তাঁরা হজ ও ওমরাহর নিয়মকানুন বিস্তারিত জানতে দেখতে পারেন (www.prothomalo.com/hajj) ওয়েবসাইটে।

ফেরদৌস ফয়সাল: প্রথম আলোর হজ প্রতিবেদক
[email protected]