কলসিন্দুর স্কুলে আগুন

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর উচ্চমাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অফিস কক্ষে আগুন দিয়ে ফুটবল টুর্নামেন্টের সনদ, মেডেল, কম্পিউটারসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা তীব্র ভাষায় এই বর্বরোচিত ঘটনার নিন্দা জানাই।

মঙ্গলবার সকালে স্কুলের অফিস কক্ষ খোলার পর দেখা যায় যে কাঠের টেবিলের ওপর ও মেঝেতে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, সনদ, মেডেল পোড়া অবস্থায় পড়ে আছে। প্রধান শিক্ষকের ভাষ্য অনুযায়ী, পুড়ে যাওয়া জিনিসের মধ্যে আছে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে উপজেলা পর্যায়ে এই প্রতিষ্ঠানের মেয়েদের অর্জন করা সনদ ও মেডেল অফিস কক্ষে ছিল। প্রত্যন্ত অঞ্চলে কলসিন্দুরের অবস্থান হলেও দেশজুড়ে এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খুদে শিক্ষার্থীরা তিনবার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা গোল্ডকাপ ফুটবলে জাতীয় পর্যায়ের চ্যাম্পিয়ন হয়। সরকারের পাশাপাশি প্রথম আলোও তাদের পাশে দাঁড়ায়। ওই শিক্ষার্থীরা পরে কলসিন্দুর উচ্চমাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখায় ভর্তি হয়ে জাতীয় পর্যায়ে নিজেদের অবস্থান করে নেয়। বাংলাদেশ নারী দলের কৃতী ফুটবলার মারিয়া মান্দা, মার্জিয়া, সানজিদাসহ কলসিন্দুর উচ্চমাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের কমপক্ষে ১০ জন মেয়ে বয়সভিত্তিক বিভিন্ন জাতীয় দলে নিয়মিত খেলে।

এ রকম একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগুন লাগিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলার কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে? আগে মেয়েদের ফুটবল খেলা নিয়ে এলাকার কিছু লোকের মধ্যে সামান্য আপত্তির আভাস পাওয়া গেলেও এখন সবাই এই মেয়েদের আশীর্বাদ হিসেবেই দেখছেন। কেননা ওই মেয়েদের জন্যই এলাকায় দ্রুত বিদ্যুৎ এসেছে। ওই মেয়েদের কৃতিত্বের কারণেই কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজটি জাতীয়করণ হতে যাচ্ছে। যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেয়েরা ফুটবল খেলে এলাকাবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছে, সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে কারা অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটাল, তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা দরকার।

আর ঘটনাটি এমন সময়ে ঘটেছে, যখন কলসিন্দুর উচ্চমাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজটি জাতীয়করণের প্রক্রিয়ায় আছে। তাহলে কি এমন কোনো পক্ষ এই ঘৃণ্য কাজ করেছে, যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির জাতীয়করণে নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত মনে করেছে? যে বা যারাই এই অপকর্ম ঘটাক না কেন, তারা দূরের কেউ নয়। এলাকারই স্বার্থান্বেষী মহল কিংবা অপরাধী চক্র এই কাজ করে থাকতে পারে। এটিকে আর পাঁচটি আগুনের ঘটনার সঙ্গে মেলানো ঠিক হবে না। কলসিন্দুরের কৃতী মেয়ে ফুটবলারদের সঙ্গে আমাদের গৌরব ও আবেগ জড়িত। এরা দেশের সমগ্র মেয়েদের জন্য প্রেরণা।

অতএব, এই ঘটনার একটি তদন্ত জরুরি। যে দুর্বৃত্তরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং মেয়ে ফুটবলারদের সনদ ও মেডেল পুড়িয়ে দিয়েছে, অবিলম্বে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হোক।