বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে কী চলছে তার চরম কিছু দৃষ্টান্ত পাওয়া গেছে প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল এ নিয়ে। প্রতিবেদনে নাম উল্লেখ না করে উত্তরার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, বাস্তবে তার সন্ধান মিলেছে। নামের বাহার আছে প্রতিষ্ঠানটির, ‘এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’। যিনি এর মালিক, তিনিই এর উপাচার্য, উপাচার্যের বিশেষ সহকারী বলে একটি পদ তৈরি করা হয়েছে, সেখানে আছেন তাঁরই ছেলে। একেবারে পারিবারিক ব্যবসায় নামিয়ে আনা হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে।
ব্যবসা নিশ্চয়ই খারাপ কিছু নয়, কিন্তু ক্লাস, পড়ালেখা বা গবেষণা এসব কিছু ধার না ধেরে উচ্চশিক্ষার নামে পয়সার বিনিময়ে সনদ বিক্রির ব্যবসা শুধু দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে না, জাতিকেও পঙ্গু ও অথর্ব করে তুলবে। আলোচ্য বিশ্ববিদ্যালয়টির পিয়ন-দারোয়ানও নাকি সেখানকার ডিগ্রি পেয়ে যাচ্ছেন। এসব কাণ্ডকীর্তি লুকিয়েচুরিয়ে হচ্ছে, তা নয়। আইন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শাখা খোলার নিয়ম নেই। দারুল ইহসান নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস আছে ১৪০টি। ৭৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয় ১২ বছর অতিক্রম করেছে। নিয়ম অনুযায়ী এই ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শর্ত পূরণ করে এখন স্থায়ী সনদ নেওয়ার কথা, কিন্তু স্থায়ী সনদ নিতে পেরেছে মাত্র দুটি বিশ্ববিদ্যালয়।
এর পরও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় এসবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। শিক্ষাসচিব বলেছেন, রাতারাতি এসব দূর করা সম্ভব নয়। আমাদের প্রশ্ন, দীর্ঘদিন ধরে যে এসব চলে আসছে তখন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন? আর কত অনিয়ম ও নিচে নামলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে?