ধান কেটে দিতে মাঠে ছাত্ররা

বীজধান বুনে দেওয়া হলো, গাছ বড় হলো, শিষ এল, ধান পাকল, তারপর কেটে নতুন ধান গোলায় তোলা হলো—আবাদের ব্যাপারটা মোটেও এ রকম মসৃণ নয়।

বীজতলা দেওয়া থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত একজন কৃষককে কী নিবিড় পরিচর্যায় নিবিষ্ট থাকতে হয়, তা শুধু তিনিই জানেন। একজন দরিদ্র কৃষক যখন চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সেই টাকায় ধান চাষ করেন, তখন কী পরিমাণ স্নেহ বুকে ধরে তিনি শিশু ধানগাছকে বড় করে তোলেন, তা অন্যের পক্ষে উপলব্ধি করা কঠিন। সেই একই কৃষক কতটা ক্ষুব্ধ হলে নিজের সৃজিত পাকা ধানের খেতে আগুন ধরিয়ে দিতে পারেন, তা উপলব্ধি করা আরও কঠিন।

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে কয়েক দিন আগে নিজের পাকা ধানে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন আবদুল মালেক সিকদার নামের একজন কৃষক। বাজারে ধানের দাম অস্বাভাবিকভাবে পড়ে যাওয়ায় এবং ধান কাটা শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় মালেক সিকদার দিশেহারা হয়ে এই কাজ করেন। তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন, একজন মজুরকে তিন বেলা খাওয়াসহ এক হাজার টাকা দিতে হবে। কাটার পর সেই ধান প্রতি মণ বিক্রি করা যাবে মাত্র ৫০০ টাকায়। তার মানে শ্রমিকপ্রতি তঁার খরচ প্রায় দুই মণ ধান। এটি দেখে রাগে, ক্ষোভে পেট্রল কিনে নিজের জমির একাংশে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন মালেক। আগুন দেখে আশপাশের জমিতে থাকা লোকজন ছুটে এসে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। পাকা ধানে আগুন জ্বলার এ দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এ খবর দেখে বুধবার দুপুরে জেলার কয়েকটি কলেজের ১৫ জন শিক্ষার্থী গিয়ে মালেকের খেতের ধান কেটে দেন। ধান কাটতে যাওয়া শিক্ষার্থীরা বলেছেন, কৃষকের অনেক কষ্ট। এই কষ্ট উপলব্ধি করেই তাঁরা মালেক সিকদারের ধান বিনা পারিশ্রমিকে কেটে দিয়েছেন। এটি সব অসহায় কৃষকের প্রতি তাঁদের প্রতীকী সমবেদনা। এটি কৃষকের দুঃখের ভাগীদার হওয়ার প্রতীকী প্রকাশ।

একইভাবে আরও কয়েক জায়গায় স্কাউট সদস্যরা স্থানীয় দরিদ্র কৃষকদের তালিকা করে তাঁদের জমির ধান কেটে দিচ্ছে বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব শিক্ষার্থীর মহতী উদ্যোগ জাতিকে আশান্বিত করে তোলে। এই শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারছে, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তারা বুঝতে পারছে, বাম্পার ফলনের পরও দাম না পেয়ে কৃষক আবাদবিমুখ হয়ে পড়তে পারেন। সেটি হলে জাতির জন্য তা কত বড় বিপদের কারণ হবে, তা তাঁরা বুঝতে পারেন।

তবে সরকারের নীতি নির্ধারক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে এই উপলব্ধি কতটুকু আছে, তা নিয়ে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন হাজির হয়েছে। ধানের বর্তমান বাজারদর ও কৃষকদের হাহাকারের যে ছবি প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে, তাতে সেই প্রশ্নবোধক চিহ্নটা ক্রমে বড় হচ্ছে। তার সঙ্গে বিস্ময়সূচক চিহ্নকেও দেখা যাচ্ছে।