বিধি না মেনে বহুতল ভবন

ভবন নির্মাণের কিছু নিয়মকানুন ও বিধি আছে, সেগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করা হলে ভবন নির্মাণ ও ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে না বলে আশা করা হয়। কিন্তু ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরোপুরি অনুসরণ করা হয় না, তা আরেকবার বোঝা গেল বুধবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত কুমিল্লা নগরের বহুতল ভবনগুলোর পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন পড়ে।

ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, কুমিল্লা নগরের বেশির ভাগ বহুতল ভবন নির্মাণের সময় ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করা হয়নি। এসব স্থাপনার অধিকাংশেরই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। তা ছাড়া, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে জায়গার মালিকেরা কোনো ধরনের জমি ছাড় দেননি। একটি ভবনের সঙ্গে আরেকটি ভবন প্রায় লেগে আছে। এ কারণে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনায় এসব ভবনে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সহজে পৌঁছাতে পারবেন না। ১৬ তলা পর্যন্ত ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ১৬ তলা পর্যন্ত আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে এসব বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।

শুধু কুমিল্লা নগর নয়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ সিটি করপোরেশন এলাকার বহুতল ভবনগুলোর একই অবস্থা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করা হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক। উঁচু উঁচু ভবন গড়ে তোলা হচ্ছে। অথচ এসব ভবনের ভেতরে যাঁরা বসবাস করবেন, তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে কারও কোনো চিন্তা নেই?

১৯৯৩ সালে হাউস বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউশনের মাধ্যমে সকল পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ইমারত নির্মাণ বিধিমালা প্রণীত হয়, তা মাঠপর্যায়ে প্রয়োগের জন্য ২০০৬ সালে আইনগত ভিত্তি পায়। কিন্তু এই বিধিমালা প্রয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আজ পর্যন্ত কোনো প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। বিধিমালা অনুসরণ করে ভবন নির্মাণ না করলে সাত বছর কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এ বিধানের প্রয়োগ নেই বললেই চলে।

ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় বলা হয়েছে, সাততলার চেয়ে উঁচু ভবনের ক্ষেত্রে আগুন শনাক্তকরণ যন্ত্র, ধোঁয়া শনাক্তকরণ যন্ত্র, পানি ছিটানোর ব্যবস্থা ও কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু দেশের বিভিন্ন নগরীর বেশির ভাগ বহুতল ভবন নির্মাণে এসবের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।

সরকারকে এখন এদিকে নজর দিতে হবে। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অমান্যকারী ও আইন উপেক্ষা করে দুর্নীতির মাধ্যমে ভবন নির্মাণের অনুমোদন যাঁরা দেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি সংস্থাসমূহের কঠোর নজরদারি বাড়ানোসহ জনসচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।