ভৈরব নদে অভিযান বন্ধ কেন?

গত মার্চ মাসের শেষ নাগাদ যশোর শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদ গ্রাস করার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে যশোর জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের যশোর অফিস এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের যশোর অফিসের জোরালো উচ্ছেদ অভিযান শুরু করার খবরটি আমাদের মনে স্বস্তি এনে দিয়েছিল। কিন্তু দেড় মাসের মাথায় সেই উচ্ছেদ অভিযান থমকে যাওয়ার খবরটি আমাদের হতাশ করেছে।

শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, শহরের দড়াটানা সেতুর পশ্চিম পাশের ৮৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হলেও পূর্ব পাশের দেড় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা আগের মতোই বহাল তবিয়তে আছে। অভিযান চালানো হচ্ছে না এসব স্থাপনার বিরুদ্ধে। এসব স্থাপনায় রয়েছে হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ নানা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, যার বেশ কয়েকটির মালিক হচ্ছেন সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এসব অবৈধ স্থাপনা থাকায় ভৈরব নদ খনন প্রকল্পের শহরাংশের চার কিলোমিটার খননকাজের জন্য ঠিকাদার পাচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড। ইতিমধ্যে পাঁচ দফায় দরপত্র আহ্বান করেও কোনো ঠিকাদার মেলেনি। আবারও দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি এ খনন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২১ সালে। কিন্তু নদের দুই পাড়ে যদি অবৈধ স্থাপনা থেকে যায় তাহলে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ হবে কীভাবে?

উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ থাকার কারণ হিসেবে যশোর জেলা প্রশাসক জনবল সংকটের কথা উল্লেখ করলেও আমাদের ধারণা, যেহেতু অবৈধ স্থাপনাগুলো সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের, সে কারণে সেগুলো উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। এমনটা হলে তা হবে দুঃখজনক।

নদ-নদী হচ্ছে এ দেশের প্রাণ। আমাদের জীবন, জীবিকা, সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য—সবকিছুর সঙ্গে আমাদের নদ-নদীগুলো সম্পর্কযুক্ত। অথচ দখল ও দূষণের কারণে এখন বেশির ভাগ নদী ধ্বংস হওয়ার পথে। একসময় ভৈরব নদও ছিল যশোর শহরের প্রাণ। দখল ও দূষণে প্রমত্তা ভৈরব এখন মরা খাল। যে করেই হোক ভৈরবকে রক্ষা করতে হবে। এ জন্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কোনো বিকল্প নেই।

ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদের বক্তব্য অনুযায়ী, ১৯২৬ সালের ভূমি জরিপ রেকর্ডের সঙ্গে নদীর প্লাবন ভূমি আইন অনেকটা সাংঘর্ষিক। প্লাবন ভূমি আইন বাস্তবায়ন করতে গেলেই দখলদারেরা ১৯২৬ সালের রেকর্ড অনুযায়ী আদালতে মামলা করার সুযোগ পাবে। এ জন্য আগে সরকারিভাবে নদীর সীমানা নির্ধারণ করতে হবে এবং এরপর উচ্ছেদ অভিযান চালাতে হবে।

আমরা চাই সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। যাঁরা নদ-নদী দখল-দূষণের সঙ্গে জড়িত, তাঁরা হয়তো নানাভাবে প্রভাবশালী। তাঁদের প্রভাব অগ্রাহ্য করতে হবে। নদ-নদীগুলোকে রক্ষায় যা যা করা প্রয়োজন, তার সব করতে হবে।