দুর্গাসাগরে হাঁস অবমুক্ত

ডাঙায় হাঁস-মুরগি ও নানা জাতের পাখি স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াবে, যার যেখানে ইচ্ছে বাসা বাঁধবে, বাচ্চা ফোটাবে; অন্যদিকে পানিতে মাছ সাঁতার কেটে বেড়াবে বিনা বাধায়। কেউ তাদের বিরক্ত করবে না। এই রকমের পশুপাখি ও জলজ প্রাণিবান্ধব জায়গাকে যথার্থ ‘অভয়াশ্রম’ বলা যেতে পারে। আক্ষেপের বিষয়, এ ধরনের অভয়াশ্রম বাংলাদেশে খুবই কম। দারিদ্র্য, জনসংখ্যার আধিক্য কিংবা সংস্কৃতিগত কারণে হয়তো আমাদের দেশে পশুপাখির অভয়াশ্রম ধারণাটি খুব বেশি বিস্তৃত হতে পারেনি।

পরিযায়ী পাখিরা দল বেঁধে এলে তাদের শিকার করাই যেন নিয়ম, এটাই স্বাভাবিক—এটিকে সাধারণ সংস্কৃতি বলে যুগ যুগ ধরে মেনে নেওয়া হয়েছে। ফলে পশুপাখির প্রকৃত অভয়াশ্রম আমরা খুব কমই গড়ে তুলতে পেরেছি। এ কারণেই পাখিরা মানুষকে এত ভয় পায়। এ কারণেই ‘মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়’। ঠিক এমনই এক সময়ে বরিশাল জেলা প্রশাসন একটি অনন্য নজির স্থাপন করল। তাদের পক্ষ থেকে বাবুগঞ্জের মাধবপাশা এলাকায় ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর দিঘিতে মাছ ও হাঁস অবমুক্ত করা হয়েছে। এর আগে দুর্গাসাগরকে পাখিদের অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তুলতে গাছে গাছে হাঁড়ি বেঁধে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে প্রশাসন। এই হাঁড়িতে পাখিরা সহজে বাসা বাঁধতে পারবে। এই হাঁড়ির বাসায় ডিম ফোটানো ও বাচ্চা বড় করা পাখিদের জন্য সহজ হবে।

বরিশাল শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে বরিশাল-স্বরূপকাঠি আঞ্চলিক সড়কের পাশে মাধবপাশা ইউনিয়নের মাধবপাশা গ্রামে ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর দিঘি। এর আয়তন ২৭ একর। এর চারপাশে রয়েছে বিভিন্ন বৃক্ষশোভিত বন। সব মিলিয়ে দুর্গাসাগরের আয়তন ৪৫ দশমিক ৪২ একর। দিঘির মাঝখানে রয়েছে গাছগাছালিতে ছাওয়া দৃষ্টিনন্দন দ্বীপ।

১৭৮০ সালে চন্দ্রদ্বীপের পঞ্চদশ রাজা শিব নারায়ণ এই বিশাল জলাধারটি খনন করেন। তাঁর স্ত্রী দুর্গামতির নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় দুর্গাসাগর। ১৯৭৪ সালে তৎকালীন সরকারের উদ্যোগে দিঘিটি পুনরায় সংস্কার করা হয়। বরিশাল জেলা প্রশাসন বর্তমানে ‘দুর্গাসাগর দিঘির উন্নয়ন ও পাখির অভয়ারণ্য’ নামে একটি প্রকল্পের অধীনে দিঘিটির তত্ত্বাবধান করছে।

সংবাদমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, গত শুক্রবার কর্মকর্তারা দুর্গাসাগর দিঘিতে ৪০০ কেজি বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা এবং ১০০ দেশি জাতের হাঁস অবমুক্ত করেছেন। সম্পূর্ণ দিঘিটি উঁচু সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘেরা। দিঘির মাঝখানে জঙ্গলপূর্ণ একটি ছোট দ্বীপ আছে। ফলে হাঁসগুলো নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতে পারবে। ডিম পাড়া এবং বাচ্চা ফোটানোর প্রাকৃতিক পরিবেশও সেখানে রয়েছে। বরিশাল জেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগ অন্যান্য এলাকার কর্মকর্তাদের প্রেরণা দেবে বলে মনে করা যায়। অন্যান্য জেলায় যেসব ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক মর্যাদাসম্পন্ন দিঘি, পুকুর বা উদ্যান আছে, সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণে বরিশাল জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।