সনদবিহীন নৌযান চলাচল

নৌপথে প্রতিবছর ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সাত মাসকে ঝুঁকিপূর্ণ মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ সময় অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে মেঘনা ও সাগর মোহনার উপকূলীয় ৩ হাজার কিলোমিটার নৌপথে সি–সার্ভে সনদ ছাড়া নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ থাকে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, দেশের অনেক নৌপথে সি-সার্ভে সনদ ছাড়াই অনেক নৌযান চলাচল করছে। এটা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক।

বুধবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ভোলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াতে অর্ধশতাধিক নৌপথে সি-সার্ভে সনদ ছাড়াই নৌযান চলাচল করছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ ট্রলার ও স্পিডবোটে পার হচ্ছে অনেকে। বাড়তি ভাড়াও গুনতে হচ্ছে তাদের। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে নৌপথে যাত্রীদের চাপ বাড়বে। এ সময় দুর্ঘটনা এড়াতে সি-সার্ভে সনদধারী নৌযান চলাচল নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা।

আমরা যাত্রীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি। সি-সার্ভে সনদ হচ্ছে যে সনদে লেখা থাকে সংশ্লিষ্ট নৌযানটি ঝুঁকিপূর্ণ মৌসুমে নদী বা সাগরপথে চলাচলের উপযোগী। নৌপরিবহন অধিদপ্তর থেকে এ সনদ দেওয়া হয়। এ সনদ না থাকার মানে হচ্ছে নৌযানটি নদী বা সমুদ্রপথে চলাচলের উপযোগী নয়। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সি–সার্ভে সনদ ছাড়াই চলছে বেশির ভাগ নৌযান। কোনো দুর্ঘটনা ঘটার পর বেশির ভাগ নৌযানের ফিটনেস না থাকার কথাই বারবার আলোচিত হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা এসব বিষয়ে একেবারেই নির্বিকার।

এ ছাড়া যেসব নৌযানের সি-সার্ভে সনদ আছে সেগুলো আসলেই নদী বা সমুদ্রে চলাচলের উপযোগী কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, দেশে ১৫ হাজার নৌযানের জন্য রয়েছে মাত্র চারজন স্থায়ী সার্ভেয়ার। হিসাব করে দেখা গেছে, একজন সার্ভেয়ার গড়ে ১৯ মিনিট ২ সেকেন্ড সময় পান একটি নৌযান সার্ভে করতে। কিন্তু নৌযান সার্ভের সময় ফাইলেই ২১টি বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে হয়। প্রতিটি বিষয় ৩ মিনিট করে পর্যবেক্ষণ করলেও সময় লাগে ৬৩ মিনিট। আর ইঞ্জিন পরীক্ষায় আরও অন্তত দুই ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়। যেখানে এত সময়ের প্রয়োজন হয়, সেখানে মাত্র ১৯ মিনিট ২ সেকেন্ড ব্যয় করে কী সনদ দেওয়া হচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। এভাবে দেশের নৌপথের নিরাপত্তা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।

আমরা এ ব্যাপারে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অবশ্যই সার্ভেয়ারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। সি-সার্ভে সনদ ছাড়া যাতে কোনো নৌযান চলাচল করতে না পারে, সে জন্য নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে।