সওজের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা

বাংলাদেশ সড়ক ও মহাসড়ক আইন অনুযায়ী, কোনো সড়ক বা মহাসড়কের ৩০ ফুটের মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু সে আইন যে সব ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না, তা বোঝা যায় গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর উপজেলায় সড়ক ও জনপথের (সওজ) জায়গায় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলার ঘটনায়।

রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর উপজেলায় সড়ক ও মহাসড়কের পাশে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। সওজের হিসাব অনুযায়ী, স্থাপনার সংখ্যা ২২৮। কিন্তু সরেজমিন দেখা গেছে, সওজের জায়গায় চার শতাধিক অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কাশিয়ানী উপজেলার তিলছড়া বাসস্ট্যান্ডে পাকা, অর্ধপাকা ও কাঁচা ৩০টি স্থাপনা রয়েছে। প্রতিটি স্থাপনা পিচের রাস্তা থেকে ৫-১০ ফুট দূরত্বে। একইভাবে মহাসড়কের ফুকরা বাসস্ট্যান্ডের দুই পাশে ২৫টি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। ঘোনাপাড়া বাজারে রয়েছে ৩০-৩৫টি অবৈধ স্থাপনা, যা মূল সড়ক থেকে ৮ থেকে ১০ ফুট দূরে। এ ছাড়া এই মহাসড়কের আরও বেশ কয়েকটি স্থানে সড়কের দুই পাশে সরকারি জায়গা দখল করে দালান, আধা পাকা, দোচালা-চৌচালা টিনের দোকান ও মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কের দুই পাশ দখল করে বালুর ব্যবসা করছেন কেউ কেউ। এসব অবৈধ স্থাপনার কারণে সড়ক দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে। যানজট সৃষ্টির পাশাপাশি প্রায়ই ঘটছে নানা ধরনের দুর্ঘটনা।

এসব অবৈধ স্থাপনা রাতারাতি গড়ে ওঠে না; সওজের লোকজনের চোখের সামনেই সেগুলো বহুদিন ধরে গড়ে ওঠে। মাঝেমধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়, কিন্তু কিছুদিন পরেই আবার সেগুলো গড়ে ওঠে। এটাও ঘটে সওজের লোকজনের জ্ঞাতসারেই। এক দোকানমালিক বলেন, ঘর তোলার সময় সওজের লোক এসেছিল, তাঁদের ম্যানেজ করেই ঘর তোলা হয়েছে। এই ‘ম্যানেজ করা’র ফলেই সরকারি জায়গা–জমিতে অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠা সম্ভব হয়। এসব বন্ধ করতে হলে সরষের মধ্যেকার ভূত তাড়াতে হবে।

সওজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। গত বছর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সওজ বিভাগের দুর্নীতি রোধের জন্য ২১টি সুপারিশ করেছিল। সেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। সওজের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্নীতির অভিযোগগুলো তদন্ত করে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করা ও যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করার মধ্য দিয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সওজ ও রেল বিভাগের খালি জায়গায় কিংবা নদ–নদী, জলাশয় ভরাট করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ঘটনা সারা দেশেই ঘটছে। এসব স্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য প্রথমত প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট বিভাগ, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, দ্বিতীয়ত আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা।