রমজানে দরুদ পাঠের ফজিলত

দরুদ শব্দটি ফারসি, দরুদ অর্থ হলো শুভকামনা, কল্যাণ প্রার্থনা। পরিভাষায় দরুদ বলতে ‘আস সলাত আলান নাবি’ অর্থাৎ নবীজির প্রতি দরুদ পাঠ বা তাঁর জন্য শুভকামনা, তাঁর প্রতি আল্লাহর দয়া, করুণা প্রার্থনা বোঝায়। মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম উচ্চারণের সময় সর্বদা ‘সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ (অর্থ: আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর ওপর) বলা হয়, যা একটি দরুদ। আল্লাহর কাছে সমুদয় ইবাদত-বন্দেগি গ্রহণযোগ্য করতে পরম ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাপূর্ণ অন্তরে নিবিষ্টভাবে নবী করিম (সা.)–এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা নেক আমল।

রমজান মাসে রোজাদাররা সিয়াম সাধনা করে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেন। দোয়া কবুল হতে মহানবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করা অত্যন্ত জরুরি। দরুদ শরিফ পাঠে আল্লাহর দরবারে ইবাদতের বিনিময় সুনিশ্চিত হয়। তাই মাহে রমজানে প্রত্যেক মোমিন মুসলমানের উচিত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর অধিক দরুদ পাঠ করা। কেননা, দরুদ পড়া এমন এক ইবাদত, যা আল্লাহ অবশ্যই কবুল করেন।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর ওপর দরুদ ও সালাম পেশ করে (অনুগ্রহ প্রার্থনা করে)। হে মোমিনগণ! তোমরাও নবীর ওপর দরুদ পড়ো (অনুগ্রহ প্রার্থনা করো) এবং তাঁকে যথাযথভাবে সালাম জানাও’ (সুরা আল-আহজাব, আয়াত: ৫৬)।

হজরত কাব ইবনে ওজারা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে যে তিনি বলেন, ‘একদিন আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, “হে আল্লাহর রাসুল! আপনার ওপর আমরা কীভাবে দরুদ পড়ব?”’

তিনি বললেন, ‘বলো, আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ; আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম ইন্নাকা
হামিদুম মাজিদ।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর বংশধরদের ওপর এই রূপ রহমত নাজিল করো, যেমনটি করেছিলে ইব্রাহিম ও তাঁর বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর বংশধরদের ওপর বরকত নাজিল করো, যেমন বরকত নাজিল করেছিলে ইব্রাহিম ও তাঁর বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)।

মাহে রমজানে বেশি বেশি দরুদ পড়া ও সালাম পেশ করা বরকত ও পুণ্যময় আমল। দরুদ শরিফ পাঠের ফজিলত অপরিসীম। একদিন এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে নামাজ পড়ে এই দোয়া করল, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহ মাফ করো এবং আমার ওপর রহম করো!’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, ‘ওহে মুসল্লি! তুমি খুব জলদি করেছ। শোনো, যখন তুমি নামাজ পড়বে, তখন প্রথমে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করবে, তারপর আমার ওপর দরুদ পাঠ করবে এবং (পরিশেষে নিজের জন্য) দোয়া করবে’ (তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসায়ি, মিশকাত)

ভক্তিসহকারে দরুদ শরিফ পাঠের মাধ্যমে বান্দার গুনাহ মাফ করা হয়। দরুদ পাঠের অশেষ সওয়াব সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর মাত্র একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত নাজিল করেন এবং কমপক্ষে তার ১০টি গুনাহ মাফ করেন। তার আমলনামায় ১০টি সওয়াব লিপিবদ্ধ করেন এবং আল্লাহর দরবারে তার মর্যাদা ১০ গুণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়’ (নাসায়ি)। তিনি আরও বলেন, ‘সেই ব্যক্তির নাক মাটিতে ঘেঁষে যাক, যার কাছে আমার নাম উচ্চারিত হয় অথচ সে আমার ওপর দরুদ পড়ে না’ (তিরমিজি)। তিনি বলেন, ‘কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে ব্যক্তি আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়ে’ (তিরমিজি)।

দৈনন্দিন জীবনে দরুদ শরিফ পাঠ করলে আল্লাহর দরবারে মানুষের দোয়া কবুল হয়। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে যে ‘কোনো দোয়াই আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না, যতক্ষণ সে দোয়ার আগে ও পরে নবী করিম (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়া না হয়।’ হাদিসে আরও বর্ণিত আছে, ‘যে ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর পবিত্র নাম শোনার পর তাঁর ওপর দরুদ পড়ে না, সে ব্যক্তি সবচেয়ে বড় কৃপণ। তার ধ্বংসের জন্য জিব্রাইল (আ.) দোয়া করেন।’ হজরত ওমর ফারুক (রা.) বলেন, ‘দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত আসমান ও জমিনের মধ্যখানে লটকে থাকে, ওপরে ওঠে না, যতক্ষণ পর্যন্ত নবী করিম (সা.)-এর ওপর দরুদ না পড়ে’ (তিরমিজি, মিশকাত)। 

ফেরদৌস ফয়সাল: প্রথম আলোর হজ প্রতিবেদক
[email protected]