নড়াইলে পুকুর ভরাটের হিড়িক

প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর-জলাশয়, নদী-খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ অনুযায়ী, জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি, এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর বা জলাধার ভরাট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু এসব আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নড়াইলে একের পর এক পুকুর ভরাট করা হচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগের।

মঙ্গলবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত তিন বছরে নড়াইল শহর ও শহরতলির অন্তত ৬০টি পুকুর ভরাট করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি পুকুর রয়েছে ১০টি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর রয়েছে ৫০টি। সেসব পুকুরের ওপর এখন বহুতল ভবন। আগে কখনো এগুলো পুকুর ছিল, তা আর বোঝার উপায় নেই।

আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে একের পর এক পুকুর ভরাট করা হচ্ছে অথচ তা বন্ধে কেউ এগিয়ে আসছে না কেন। স্থানীয় প্রশাসন তাহলে কী করছে? পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো মাথাব্যথা নেই কেন? এভাবে পুকুর ভরাট করা যে আইনের লঙ্ঘন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, তা তাদের বিবেচনায় নেই কেন? পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নদী, খাল, বিল, পুকুর ইত্যাদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্ষা মৌসুমে শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা নিরসনে এগুলো খুবই কার্যকর। এগুলো নগরের পানির অন্যতম উৎস। এসব জলাধার যদি ধ্বংস করা হয়, তাহলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হয়ে পড়বে।

নড়াইলের স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিজ্ঞ লোকজন মনে করেন, এভাবে একের পর এক পুকুর ভরাটের কারণে সেখানকার প্রাণিকুলের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। বাতাস উষ্ণ হয়ে তাদের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে পড়বে। এ ছাড়া পানির ধারণক্ষমতা কমে গেলে বর্ষা মৌসুমে বন্যার আশঙ্কা দেখা দেবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে বড় ধরনের কোনো অগ্নিকাণ্ড ঘটলে এক ফোঁটা পানিও পাওয়া যাবে না। প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, নড়াইলে এখন জমির দাম বাড়ছে। একটি পুকুরে মাছ চাষ করে বছরে যে টাকা পাওয়া যাচ্ছে, তার চেয়ে ওই পুকুর ভরাট করে বিল্ডিং করে ঘর ভাড়া দিলে বছরে দ্বিগুণ টাকা আয় হয়। এ কারণেই পুকুর ভরাট করে বহুতল ভবন তৈরির হিড়িক পড়েছে।

এগুলো খুবই উদ্বেগজনক তথ্য। আমরা এ ব্যাপারে নড়াইল জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। পুকুর ভরাট বন্ধে তাদের অবিলম্বে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এ-সংক্রান্ত যেসব আইন রয়েছে, তার প্রয়োগ ঘটাতে হবে। পুকুর ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি পুকুর ভরাটের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে নাগরিক সমাবেশসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে।