মহাসড়কে ময়লার স্তূপ

কোনো নগরের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের দায়িত্ব ওই নগরের সিটি করপোরেশনের। কিন্তু সিলেট নগরের দক্ষিণ সুরমার মোমিনখলা এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঘেঁষে ময়লা–আবর্জনার স্তূপ গড়ে ওঠার খবর পড়ে মনে হয় না যে সিলেট সিটি করপোরেশনের সে কথা স্মরণে আছে।

বুধবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মোমিনখলা এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঘেঁষে স্থানীয়রা প্রতিদিনই ফেলছেন ময়লা-আবর্জনা। সড়ক ঘেঁষে অন্তত আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে বর্জ্যের স্তূপ। সিলেটে কাউকে ঢুকতে হলে এ মহাসড়ক দিয়েই ঢুকতে হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দা ছাড়াও মহাসড়কটি দিয়ে শিক্ষার্থী, দিনমজুর, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ নগরে যাতায়াত করে থাকেন। রাস্তা ঘেঁষে আবর্জনা পড়ে থাকায় পথচারী ও যানবাহনের যাত্রীদের উৎকট দুর্গন্ধ সহ্য করে ওই এলাকা পার হতে হয়। বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলে এসব বর্জ্য মূল সড়কে অনেক সময় গড়িয়ে চলে আসে। ময়লা-আবর্জনা থেকে এলাকায় জীবাণু ছড়াচ্ছে। মশা-মাছি, পোকামাকড় জন্ম নিচ্ছে। কিন্তু সিলেট সিটি করপোরেশনের এসব বর্জ্য অপসারণের কোনো উদ্যোগই নেই।

যেকোনো নগরের বাসিন্দাদের দূষণমুক্ত স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করার অধিকার আছে। তাঁদের সে অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হচ্ছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু দেখা যায়, শুধু সিলেট নয়, আমাদের দেশের কোনো সিটি করপোরেশনই সে দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করে না। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য নগরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনগুলোর চরম গাফিলতি লক্ষ করা যায়। প্রধান সড়কের পাশে, আবাসিক এলাকার সড়কগুলোতে, এমনকি অভিজাত এলাকার সড়কে বর্জ্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকে। অথচ নাগরিক সেবা পাওয়ার জন্য নগরবাসী সিটি করপোরেশনকে নিয়মিত কর দিচ্ছেন।

প্রশ্ন হচ্ছে, এ রকমই কি চলবে? আমাদের নগরগুলো কি কখনো পরিচ্ছন্ন নগর হিসেবে গড়ে উঠবে না? বিশ্বের অন্যান্য নগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হলে আমাদের এখানে বাধা কোথায়? সিটি করপোরেশনগুলোর টনক কবে নড়বে?

যেহেতু নাগরিক সেবা পাওয়ার জন্য নগরবাসী কর দেন, তাই সিটি করপোরেশনগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে নগর পরিচ্ছন্ন রাখার কাজটি তাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে করা। এ ক্ষেত্রে বিশ্বের উন্নত নগরগুলো যেভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে, সেগুলো তারা অনুসরণ করতে পারে। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও জৈব সার উৎপাদন করা সম্ভব। স্থানীয়ভাবে অনেকে তা করছে। এ ব্যাপারে সরকারিভাবে যাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়, সে চেষ্টা তাদের করতে হবে। এ ছাড়া নাগরিকদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। যত্রতত্র ময়লা ফেলার কুফল সম্পর্কে তাঁদের জানাতে হবে।

সিলেট সিটি করপোরেশনসহ সব সিটি করপোরেশন সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমাদের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।