পবিত্র ঈদুল ফিতর

দীর্ঘ এক মাসের সংযম সাধনার শেষে আনন্দময় উৎসব ঈদুল ফিতর সমাগত। আমাদের প্রিয় পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট, শুভানুধ্যায়ী—সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। সব ভেদাভেদ ভুলে একে অপরকে বুকে জড়ানোর দিন; সাম্য, সৌহার্দ্য, ভালোবাসা, মিলনের দিন।
পবিত্র রমজান মিতাচার অনুশীলনের যে সুযোগ নিয়ে আসে, তার তুলনা হয় না। রোজা শুধু ইন্দ্রিয়ের কৃচ্ছ্রসাধনা নয়, আত্মিক বিশুদ্ধতা অর্জনেরও পথ দেখিয়ে দেয়। এক মাসের রোজার অবসানে তাই ঈদুল ফিতরের উৎসব কেবল ভোজনের মাধ্যমে ইন্দ্রিয়তৃপ্তির উৎসব নয়, বিশুদ্ধ আত্মা নিয়ে জীবনকে নতুন করে সাজানোর অঙ্গীকারেরও উৎসব। আত্মিক পরিশুদ্ধির ফলে দূর হয়ে যাবে সব সংকীর্ণতা ও ভেদাভেদ। পুরো রমজান মাস আমরা যে সংযমের অনুশীলন করেছি, তা আমাদের জীবন চলার সব ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘনের নেতিবাচক প্রবণতা থেকে রক্ষা করবে—এমনই প্রত্যাশা। অন্যায়, অবিচার, ঘৃণা, বিদ্বেষ, হিংসা, হানাহানি—মানুষের সব নেতিবাচক প্রবণতার রাশ টেনে ধরবে। ঈদ যে আনন্দের বার্তা বয়ে এনেছে, তার মর্মমূলে আছে শান্তি ও ভালোবাসা। পরস্পরের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হয়ে ওঠার এক মহান উপলক্ষ ঈদ। ঈদুল ফিতরের আগমনী সুরে বেজে চলেছে মানুষে মানুষে মিলনের এই আকুতি। তাই মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের প্রতিবেশীদের নিয়ে তাদের সবচেয়ে বড় উৎসব বরণের জন্য প্রস্তুত।
ঈদ উৎসব উদ্যাপনের জন্য বিপুলসংখ্যক কর্মজীবী মানুষ রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহর থেকে পরিবার-পরিজনসহ গ্রামের বাড়ি যান। কিন্তু যানবাহনের অপ্রতুলতার কারণে প্রতিবছরই তাঁদের বেশ ভোগান্তি হয়। ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন ও বাড়তি বগি সংযোজন করার পরও অনেক মানুষকে ট্রেনের ছাদে চড়ে বাড়ি ফিরতে দেখা যায়। বাস ও লঞ্চের যাত্রীদের টিকিটের জন্য হাহাকার চলে। ভোগান্তি কিছুটা লাঘব হতে পারে টিকিট কেনাবেচা ও যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ও ব্যবস্থাপনা উন্নত করার মাধ্যমে। সড়ক-মহাসড়কে যানজট ও দুর্ঘটনার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সতর্কতা খুব জরুরি। দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন দ্রুত সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া না হলে যে যানজট বেঁধে যায়, তা অত্যন্ত জটিল ও দুর্ভোগময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
মানুষে মানুষে মিলনের উৎসব যখন আসে, তখন আমাদের এটাও ভাবতে হয় যে আমাদের দেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য প্রকটতর হচ্ছে। এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে বিপুলসংখ্যক মানুষ। খুবই স্বল্পসংখ্যক মানুষের হাতে পুঞ্জীভূত হয়েছে ও হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্ত। এমন বৈষম্য ঈদ উৎসবের সর্বজনীনতা ক্ষুণ্ন করে। ঈদ আমাদের সামষ্টিক জীবনে যে মিলন ও শুভবোধের চর্চার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, তা সঞ্চারিত হোক সবার প্রতিদিনের জীবনযাপনে। নিছক আনুষ্ঠানিকতা নয়, ঈদ হোক জীবনকে নবায়ন করার আহ্বান। ঈদের আনন্দ হোক সর্বজনীন।