ভূমির বকেয়া খাজনা

৩৭টি মন্ত্রণালয়ের কাছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৮৬১ কোটি টাকার খাজনা বকেয়া পড়ার খবরটি আমাদের প্রশাসনিক ব্যর্থতার একটি খণ্ডিত চিত্র মাত্র। শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, যে মন্ত্রণালয়ের অধীনে বেশি ভূমি আছে, সেই মন্ত্রণালয়ের কাছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পাওনার পরিমাণটাও বেশি। এর মধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কাছে সর্বোচ্চ পাওনা ৩০১ কোটি টাকা। এরপর তালিকায় আছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়—১৯৫ কোটি টাকা এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়—২০৮ কোটি টাকা। এলাকা ও জমির শ্রেণিভেদে ভূমি উন্নয়ন কর বছরে সর্বনিম্ন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা। বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত ভূমির উন্নয়ন কর ৪০ থেকে ৩০০ টাকা। শিল্পকাজে ব্যবহৃত জমির ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ১৫০ টাকা।

সরকারের এক সংস্থা বা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অন্যান্য সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আর্থিক লেনদেন থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলো পাওনা পরিশোধ করবে না। সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার আলাদা দায়িত্ব আছে। একটি মন্ত্রণালয় বা সংস্থা সেই দায়িত্ব পালন না করলে অন্যরা যে বেকায়দায় পড়ে, সেই সত্যটি সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের পদাধিকারীরা উপলব্ধি করতে অপারগ।

ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা সরকারের একটি স্থায়ী আয়ের উৎস। ১৯৯৬ সালের ভূমি আইন অনুযায়ী, শ্রেণিভেদে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হয়। বেসরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমির কর সংশ্লিষ্টরা পরিশোধ না করলে ভূমি মন্ত্রণালয় আইনি ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এমনকি বকেয়া খাজনার দায়ে ভূমি বাজেয়াপ্ত করার নজিরও আছে। কিন্তু বকেয়া আদায়ের জন্য কোনো সরকারি সংস্থা বা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে সে ধরনের ব্যবস্থা নেয় না। ফলে সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে খাজনার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এ ছাড়া গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ প্রভৃতি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের কাছেও মোটা অঙ্কের টাকা পাবে। কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়ে পাওনা পরিশোধের তাগিদ দিয়েই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করে।

এই কর্মসংস্কৃতির অবসান হওয়া প্রয়োজন। সংশ্লিষ্টদের মনে রাখতে হবে যে সরকার হলো একটি সমন্বিত ও বহুমাত্রিক প্রতিষ্ঠান। কোনো একটি মন্ত্রণালয় বা সংস্থা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করলেও পুরো প্রশাসনিক ব্যবস্থাই অচল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় যেসব সংস্থা বা মন্ত্রণালয় ভূমি কর বকেয়া রেখেছে, তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে। যে আইন সাধারণ মানুষ বা বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে, সেই আইন সরকারি সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে কেন ব্যবহার করা যাবে না?

সরকারি সংস্থাগুলোর দায়িত্ববোধ কবে জাগ্রত হবে?