জয়পুরহাটের বেহাল সড়ক

জয়পুরহাটের দুটি সড়কের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে চলায় সেখানকার মানুষকে যে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তা অগ্রহণযোগ্য। মঙ্গলবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, জয়পুরহাট-আক্কেলপুর এবং ক্ষেতলাল-গোপীনাথপুর-আক্কেলপুর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে। শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের আগস্টে। কিন্তু কাজে যে গতি, তাতে আগামী দুই মাসে শেষ হওয়া অসম্ভব।

এ পর্যন্ত মাত্র ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কাজ চলছে খুবই ধীরগতিতে। সড়কগুলোতে ইট, খোয়া, বালু ফেলে রাখা হয়েছে। ঢালাই বা পিচের প্রলেপের কাজ এখনো শুরুই হয়নি। সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে আবার বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেগুলো ঠিক করার কোনো লক্ষণই নেই। এতে পথচারী, যানবাহন চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। গর্ত আর খানাখন্দে ভরা সড়কে চলাচলের সময় গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। ঝাঁকুনিতে যাত্রীরা সিটে বসে থাকতে পারে না।

সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের এই ধীরগতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। কিন্তু শুধু জয়পুরহাটে নয়, দেশের অনেক স্থানেই এমনটা হচ্ছে। প্রায়ই বলা হয়, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে তার উল্টোটাই দেখা যায়। প্রকল্প গ্রহণ থেকে তার বাস্তবায়ন, প্রতিটি স্তরেই দুর্বল পরিকল্পনা, দক্ষতার ঘাটতি ও গাফিলতি থেকেই যাচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, ভাগাভাগিতে বেশি দৃষ্টি দেওয়ায় নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি গৌণ হয়ে পড়ে। সড়ক-মহাসড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে। দরপত্র আহ্বান থেকে শুরু করে নির্মাণকাজ পর্যন্ত চলে অবাধ দুর্নীতি। দরপত্রের মাধ্যমে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়। আমলাতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক হীন স্বার্থের কারণে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা দেয় এবং এর ফলে খরচ বাড়ে প্রকল্পের। পকেট কাটা যায় সরকারের তথা জনগণের।

প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবেই কি চলবে? প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, জয়পুরহাটের দুটি সড়কের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে জয়পুরহাট সড়ক বিভাগ। কিন্তু আমরা মনে করি, এই নোটিশ পাঠানোই যথেষ্ট নয়। কাজের ধীরগতির জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শাস্তি দিতে হবে। আমাদের দেশের মূল সমস্যা হচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি ও শাস্তির ব্যবস্থা না থাকা। কর্তব্যে অবহেলার জন্য যদি তারা শাস্তি পেত, তাহলে দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো এমন বেহাল হতো না। সরকারকে এখন এদিকে নজর দিতে হবে। সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

আমরা চাই জয়পুরহাটের দুটি সড়কের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হোক। দূর হোক জনগণের ভোগান্তি।