এবারের অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড

দিনের আকাশে সূর্য এবং কখনো–বা চাঁদও দেখতে পাই। আর নক্ষত্রদের দিনের আকাশে দেখতে পাই সূর্যগ্রহণের সময়। নিয়মিত বিরতিতে বুধ ও শুক্র গ্রহকেও সূর্যের বুকে দেখতে পাই। আমরা দেখি ছোট কালো বিন্দুর আকারে বুধ অথবা শুক্র গ্রহ সূর্যের ওপর দিয়ে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে চলে যায়। আর রাতে থাকে আকাশের ভিন্ন একটি রূপ।

যখন সূর্যের আলো ক্রমেই ম্রিয়মাণ হয়ে যায়, আকাশের বুকে ফুটে উঠে একে একে আলোক বিন্দু। আলোক বিন্দুগুলো একেকটা সূর্যের মতোই নক্ষত্রবিশেষ। সেই কবে মানুষ যখন বৃক্ষচারী থেকে গুহাবাসী হয়েছে, হয়তোবা তখন অথবা তারও পর মানুষ এই আকাশের নক্ষত্রগুলোকে নিয়ে তৈরি করে নানান গল্প-উপকথার। গল্পের নক্ষত্র বা নক্ষত্রগুলোর একেকজন শক্তিমান দেব-দেবী হিসেবে দেখতে পাই। সে সময়কার মানুষের বিশ্বাস ছিল, এই শক্তিমানেরাই জীবনের গতি–প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে। সময়ের চাকায় ভাবনাগুলো বদলায়। বদলে চলে। বদলাতে হয়।

তবে মজার বিষয় হচ্ছে উপকথার চরিত্রগুলোর নামে নাম দেওয়া হয় এই তারকাদের। আকাশের বুকে চলমান নক্ষত্রগুলোকে দেখার জন্য গ্যালিলিও টেলিস্কোপের সাহায্য নেন। খুলে যায় জ্ঞানের এক নতুন জগৎ। জ্যোতির্বিজ্ঞানের জগৎ। ভাগ্য নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় তাদের আর দেখা যায় না। শুরু হয় জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং জ্যোতিষশাস্ত্রের পৃথক পথচলা।

ফেলে আসা সময়ের মতো আজও আকাশের প্রতি রয়েছে মানুষের এক অদম্য আকর্ষণ। সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ অথবা ধূমকেতুর আগমনে প্রচুর আগ্রহী মানুষ দেখতে পাই। তবে বাংলাদেশ খুবই ব্যতিক্রমী একটি দেশ, যেখানে প্রবল আগ্রহ থাকার পরেও জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়টি কোনো স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত নয়। আর এই না থাকার প্রয়োজনেই আমাদের উদ্যোগ নিতে হয় বিকল্প ভাবনার। শুরু হয় জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে এক উত্সব মুখর আয়োজন—অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড।

১২ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছাত্রছাত্রীদের জন্য বার্ষিক আয়োজনটি শুরু হয় ২০০৬ সালে। জেলা শহরগুলোতে প্রাথমিক নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়ে আয়োজন করা হয় জাতীয় পর্যায়ের বা চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার। সেই বিজয়ীরাই পরবর্তী সময়ে অংশ নেয় আন্তর্জাতিক অ্যাস্ট্রোনমি অলিম্পিয়াডে।

প্রতিবছরের মতো এ বছরও আয়োজন করা হচ্ছে অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াডের। সিনিয়র ও জুনিয়র গ্রুপে বিভক্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাংলা ও ইংরেজি উভয় মাধ্যমেই থাকবে প্রশ্নপত্র। বর্তমান ২০১৯ সালে আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর। সহযোগী হিসেবে বরাবরের মতো রয়েছে রুশ দূতাবাস বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বিভাগ। আরও আছে প্রথম আলো ও একাত্তর টিভি।

২১ জুন ২০১৯, শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে ১৬টি জেলার আগ্রহীদের বাছাই কার্যক্রম। সেখান থেকে মোট ১ হাজার ২০০ জন প্রতিযোগীকে নিয়ে ২০ জুলাই ঢাকায় আয়োজন করা হবে চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। এ বছর রোমানিয়ায় ২৪তম ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমি অলিম্পিয়াডের আসর বসছে। ঢাকায় চূড়ান্ত পর্বে বিজয়ী সিনিয়র গ্রুপের ২ জন এবং জুনিয়র গ্রুপের ৩ জন রোমানীয় বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিত্ব করবে।

অন্যদিকে জুনিয়র গ্রুপের ৪ জন ১৫তম এশিয়ান-প্যাসিফিক অ্যাস্ট্রোনমি অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। এখানেই শেষ
নয়। চূড়ান্ত পর্বে বিজয়ী সিনিয়র গ্রুপের বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ২ জন রুশ সরকারের বৃত্তি নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার জন্য রাশিয়া যাবে।

এবারের আয়োজনের প্রায় সম্পূর্ণ খরচই বহন করছে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর। আর সংগত কারণেই এই আয়োজনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড’।

১৯ জুনের মধ্যে আগ্রহী ব্যক্তিদের নাম রেজিস্ট্রেশন করতে হবে অনলাইনে www.astronomybangla.com।

এই আয়োজনের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে বিজ্ঞানশিক্ষার অপার সম্ভাবনার নতুন জানালা উন্মুক্ত হবে।

মশহুরুল আমিন বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান