১০০ টাকায় কনস্টেবল নিয়োগ

কৌটিল্য অর্থশাস্ত্রে লিখেছিলেন, ‘জলের মাছ জল পান করিলে যেমন বাহির হইতে টের পাওয়া যায় না, রাজকর্মচারীরা সেইভাবে ঘুষ খান, কেহ জানিতে পারে না।’ সেই আমলে হয়তো কৌটিল্যের এই কথা সত্য ছিল। কিন্তু এই কালে সেই সত্য লুপ্ত হয়েছে। এই আমলে কে বা কারা কীভাবে কত ঘুষ খান, সে খবর বহু মানুষেরই বিলক্ষণ জানা আছে। এমনকি কোথায় ঘুষের ‘রেট’ কত, সে বিষয়ে পরস্পর জেনে নেওয়াও এখন জনসাধারণের জীবনঘনিষ্ঠ অতিসাধারণ চর্চা।

চাকরিতে, বিশেষ করে পুলিশের চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে টাকাপয়সার লেনদেনের কথা বহুলবিশ্রুত। পুলিশের চাকরিতে মোটা টাকার লেনদেন হয়—এই কথার সত্যতা যতই তর্কসাপেক্ষ হোক, জনসাধারণের মনের মধ্যে নেতিবাচক এ ধারণাই অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে প্রোথিত। পুলিশ বিভাগকে সেই কলঙ্ক থেকে মুক্ত করতে কিছু জেলায় পুলিশ কর্মকর্তাদের নেওয়া উদ্যোগ সবার মনে আশা জাগাচ্ছে। সর্বশেষ সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ যে ঘোষণা দিয়েছে, তা দৃষ্টান্তমূলক। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান বলেছেন, সুনামগঞ্জে ২৯ জুন পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে। জেলা থেকে এবার ২৫৫ জন কনস্টেবল নিয়োগ করা হবে। এই নিয়োগে সরকার-নির্ধারিত ১০০ টাকা ফি ছাড়া আর কোনো টাকা লেনদেন হতে দেওয়া হবে না। কোনো তদবিরও আমলে নেওয়া হবে না। শুধু যোগ্যতার ভিত্তিতেই এই নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তিনি চাকরিপ্রার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘নিয়োগ যদি ভালো না হয়, তাহলে পুলিশ সুপার হিসেবে আমারও শাস্তি হতে পারে।’

পুলিশ সুপারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিদের এ ধরনের বক্তব্যকে গতানুগতিক ও নিয়মরক্ষার ‘সরকারি’ বক্তব্য হিসেবে অনেকে মনে করতে পারেন। কিন্তু মো. বরকতুল্লাহ খানের এই বক্তব্য যে নিতান্ত আস্থা-অযোগ্য প্রচলিত আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নয় এবং নিয়োগে ঘুষের লেনদেন ঠেকাতে জেলা পুলিশের অবস্থান যে আসলেই আন্তরিক, তার জোরালো আভাস পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিটি থানা এলাকায় মাইকে প্রচার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চাকরির জন্য কেউ যেন কাউকে কোনো টাকা না দেন, তা গ্রামে গ্রামে জানানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে যাঁরা চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, ‘বিপদে পড়ার আগেই’ তাঁদের টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে।

কনস্টেবল পদে যাঁরা চাকরি নেন, তাঁদের বেশির ভাগই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। চাকরি পাওয়ার জন্য যদি তাঁদের জমিজমা, গরু–বাছুর বিক্রি করে টাকা জোগাড় করতে হয়, তাহলে চাকরি পাওয়ার পর সেই অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য তাঁদের মধ্যে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতা কাজ করা স্বাভাবিক। সুনামগঞ্জ পুলিশ প্রশাসন তাদের সংকল্পে অটল থাকলে নবীন কনস্টেবলরা সেই অভিশপ্ত কুপ্রবণতার হাত থেকে মুক্তি পাবেন।