পায়রায় চীনা শ্রমিকের মৃত্যু

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষে এক চীনা শ্রমিকের মৃত্যু শুধু বেদনাদায়ক নয়, দেশের জন্য বিব্রতকর। এর আগে গত মঙ্গলবার বয়লারে কাজ করার সময় পরনের বেল্ট ছিঁড়ে সবিন্দ্র দাস নামে এক বাঙালি শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে। তখন গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে চীনা শ্রমিকেরা তাঁকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছেন। একজন চীনা শ্রমিক মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে আইডি কার্ড নিয়ে গেলে বাঙালি শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। তাঁরা প্রথমে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করেন, পরে চীনা শ্রমিকদের ওপর হামলা চালান। এই পরিস্থিতিতে বাঙালি ও চীনা শ্রমিকদের মধ্য দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে গুরুতর আহত ছয় চীনা শ্রমিক এবং দুই বাঙালি শ্রমিককে চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বুধবার সকালে সেখানে ঝাং ইয়াং ফাং নামের এক চীনা শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে। আহত অপর চীনা শ্রমিকদের ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে।

পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে দেশীয় শ্রমিকদের পাশাপাশি দুই হাজার চীনা শ্রমিক কাজ করেন। তাঁরা আমাদের অতিথি। বাঙালি বরাবরই অতিথিপরায়ণ। ভাষা, সংস্কৃতি, খাদ্য ও পোশাকের ভিন্নতার কারণে তাদের সঙ্গে বাঙালি শ্রমিকদের ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু যাঁরা কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত, তাঁদের কর্তব্য হলো নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে একটি সুন্দর কর্মপরিবেশ তৈরি করা। মঙ্গলবার দফায় দফায় সংঘর্ষ চললেও কেন তাঁরা প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ সদস্য তলব করলেন না, সেটাও প্রশ্ন বটে। জেলা সদর ঘটনাস্থল থেকে খুব বেশি দূরে নয়। কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীল হলে হয়তো এই সংঘাত এড়ানো যেত।

সংঘর্ষের খবর শুনে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ঘটনাস্থলে যান। তাঁর অনুরোধে শ্রমিকেরা পুনরায় কাজেও যোগ দিয়েছেন। সেখানে কর্মরত বাঙালি ও চীনা শ্রমিকদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। এসব ইতিবাচক ও সময়োচিত পদক্ষেপ। ঘটনা তদন্তে ইতিমধ্যে যে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, আমরা আশা করব, তারা যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে এবং সত্য উদ্‌ঘাটন করতে সক্ষম হবে। যেহেতু ঘটনায় একজন বিদেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, সেহেতু তদন্তের বিষয়টি হেলাফেলা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চীনা, জাপানিসহ বিভিন্ন দেশের শ্রমিক ও কর্মকর্তারা কাজ করেন। তাঁরা বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার। তাঁদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক হতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই বিদেশি শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ কথার অর্থ এই নয় যে তাঁরা কোনো অন্যায় করলে তার বিচার হবে না। ভবিষ্যতে যাতে কেউ আইন হাতে তুলে নিতে না পারে, সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা প্রয়োজন।