৩ কিলোমিটারে ৯ বিদ্যালয়

‘বিদ্যালয়ের অভাবে শিশুশিক্ষা বিঘ্নিত’—এ ধরনের শিরোনামের সংবাদ এতটাই সাধারণ যে এ খবর নিয়ে সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে অসাধারণ কর্মকর্তাদের কাউকেই বিচলিত হতে দেখা যায় না। সবাই জানে, সরকার প্রতিবছরই নতুন নতুন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলেও এখনো দেশে চাহিদার তুলনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা অপ্রতুল। ঠিক এমনই এক পরিস্থিতিতে খবরের কাগজে এসেছে একটি খবর, ‘তিন কিলোমিটারে নয়টি স্কুল, মিলছে না শিক্ষার্থী’।

শিরোনাম পড়ে যে কেউ ধাক্কা খেতে পারেন। তাঁর মনে হতে পারে সরকারি অর্থের অপব্যয় করে মাত্র তিন কিলোমিটার এলাকার মধ্যে নয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বানানো হয়েছে। তবে খবরের বিস্তারিত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় বন্যা ও নদীভাঙনের কারণে বিভিন্ন এলাকার নয়টি বিদ্যালয় বাঁধের ওপর স্থানান্তর করা হয়েছে। এমনিতেই এক জায়গায় এতগুলো বিদ্যালয়, তার ওপর বাঁধ এলাকায় জনবসতি নেই বললেই চলে। ফলে এসব বিদ্যালয়ে পাঁচ-সাতজনের বেশি ছাত্রছাত্রী নেই। নেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুবিধা। বিদ্যালয় ও বসতঘর দেখতে একই রকম। জাতীয় পতাকা না টাঙালে বিদ্যালয় কোনটি, তা বোঝা যায় না। বিদ্যালয়গুলো কুতুবপুর ও চন্দনবাইশা ইউনিয়নে পড়েছে।

২০১৭ সালের নদীভাঙনে বিদ্যালয়গুলোর ভবন বিলীন হওয়ার পর এই দশা চলছে। তার মানে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনিবার্যভাবেই বিদ্যালয়গুলো স্থানান্তর করা হয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যে প্রায় দেড় বছর পার হয়েছে। লোকালয়ের কাছে বিদ্যালয় না হওয়ায় বহু শিশু বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। শিক্ষকেরা অস্থায়ী বিদ্যালয়ে এসে সময় কাটিয়ে চলে যাচ্ছেন। তাঁদের বেতন–ভাতা সরকারকে দিতেই হচ্ছে। এতে একদিক থেকে সরকারি তহবিলের অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে বহু শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সে কারণে দ্রুত এসব বিদ্যালয়ের কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়া দরকার।

শিক্ষা কর্মকর্তারা অবশ্য বলেছেন, প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেসব চরে জনসংখ্যা বেশি, সেসব চরে বিদ্যালয়গুলো সরিয়ে নেওয়া হবে। এ সিদ্ধান্তকে যথার্থ বলা যায়। জনসংখ্যার ঘনত্ব যেখানে বেশি, সেখানে এগুলো সরিয়ে নেওয়াটাই যথার্থ হবে। তবে খেয়াল করা দরকার, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার আশঙ্কা আছে। চিঠি ও ফাইল চালাচালিতে সময়ক্ষেপণ হলে সরকার ও জনগণ উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকারের কর্মকর্তারা উদ্যোগী হলে চলতি বছরের মধ্যেই বিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ ভবনে তাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে সবার আগে সরকারের সদিচ্ছা দরকার।

সারিয়াকান্দির মতো আরও যেসব এলাকায় একইভাবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে কিন্তু কার্যত অকার্যকর রয়েছে, সেগুলোকে কার্যকর করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। অন্যথায় সেটি সরকারি অর্থের অপচয় ও শিশুদের লেখাপড়া ব্যাহত করার নামান্তর বলেই গণ্য হবে।