বাঁধের জমিতে অবৈধ স্থাপনা

ভোলার চরফ্যাশনে আওয়ামী লীগের একজন নেতার নেতৃত্বে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের জমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের খবরটি এই ধারণাকেই প্রতিষ্ঠিত করে যে ক্ষমতাসীন দলের নেতা হলেই বোধ হয় যা খুশি তাই করা যায়।

সোমবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, চরফ্যাশন উপজেলার আসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরে আলমের নেতৃত্বে কয়েকজন মৎস্য ব্যবসায়ী চরফ্যাশনের বেতুয়া লঞ্চঘাটের পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের জমি দখল করে পাকা ঘর নির্মাণ করছেন। শনিবার থেকে এই নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।

স্থাপনা নির্মাণের জন্য বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৫০ গজ দখল করা হয়েছে। সেখানে বন বিভাগের চারটি গাছ কাটার তোড়জোড় চলছে। অবৈধ দখলের বিষয়ে স্থানীয় লোকজন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, এভাবে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হলে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধটি হুমকির মুখে পড়বে এবং এলাকার পরিবেশ নষ্ট হবে। কেননা ইতিমধ্যেই বাঁধসংলগ্ন বেতুয়া লঞ্চঘাট এলাকায় দৃষ্টিনন্দন পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। উপকূলীয় বন বিভাগ ওই বাঁধে ও নিচের জমিতে বনায়ন করেছে।

নিয়ম অনুযায়ী, পাউবোর জমি বার্ষিক ইজারা নিয়ে ভোগদখল করা যায়। তবে সেখানে স্থায়ী পাকা ভবন নির্মাণ করা যায় না। বোঝাই যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের নেতা বলে নুরে আলম কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না। তবে নুরে আলম শুধু একা নন, দেশজুড়েই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা এভাবে নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে চলেছেন। তাঁরা পাউবো, সওজসহ সরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন জমিতে আবাসন প্রকল্প, বিপণিবিতান, স্কুল-কলেজ, গাড়ির গ্যারেজ, এমনকি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন এবং করছেন। কিন্তু তাঁদের যেন বলার কিছু নেই। ক্ষমতাসীন দলের পরিচয় মানেই যেন যা খুশি করার অবাধ লাইসেন্স। এমন অভিযোগও রয়েছে যে সরকারের যেসব কর্তৃপক্ষের জমি এভাবে ক্ষমতাসীন নেতা-কর্মীরা দখল করছেন, সেসব কর্তৃপক্ষের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের সহায়তা করে থাকেন। মাঝেমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতাও থাকে। এগুলো খুবই দুঃখজনক ব্যাপার।

আমরা এ ব্যাপারে সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই। কিছু নেতা-কর্মীর এ ধরনের অপকর্ম যে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, তা কি তারা বুঝতে পারছে না? এসব দখলবাজ নেতা-কর্মীকে আইনের আওতায় এনে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। যাঁরা তাঁদের এসব অপকর্মে সহায়তা করছেন, তাঁদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

আমরা চাই চরফ্যাশনের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কাজ বন্ধে পাউবো কর্তৃপক্ষ দ্রুত উদ্যোগ নেবে। সেই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকেও এ ধরনের অপতৎপরতা রোধে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।