শরীয়তপুরে নদীভাঙন

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় ছয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুঃখজনকভাবে নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। দুই থেকে আড়াই বছরের ব্যবধানে নদীগর্ভে বিলীন হওয়া স্কুলগুলোর কার্যক্রম জোড়াতালি দিয়ে চলছে। স্কুলের শারীরিক অবকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও এর কার্যক্রম যাঁরা চালিয়ে রেখেছেন, তাঁদের আমরা ধন্যবাদ জানাই। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে স্কুলগুলোর জন্য নতুন করে জায়গা সংকুলান করা সম্ভব হয়নি। আপাতত ভাড়ায় জায়গা নিয়ে টিনের ঘর তোলা হয়েছে। কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে এটা বলতে পারেননি যে এসব স্কুলের ভবন নির্মাণ কবে দেখা যাবে। 

আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছি। কিন্তু আমাদের উন্নয়নের সঙ্গে অনেক মৌলিক বিষয়ের অসংগতি রয়েছে। আমরা প্রায় সবাই আপ্তবাক্য উচ্চারণ করতে অভ্যস্ত যে শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু মেরুদণ্ড সোজা রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব কাজই অসম্পূর্ণ কিংবা আধাখেঁচড়া থাকে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে আমাদের বাজেট যত বড় হয়েছে, সেই তুলনায় শিক্ষা বাজেট বাড়েনি। যেমন ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৬-১৭ পর্যন্ত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির খাতওয়ারি বরাদ্দে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট জিডিপির ৬ শতাংশ থাকলেও ২০১৭-১৮ থেকে তা নিচে নামছে। উপরন্তু প্রাথমিক শিক্ষায় এবার আমরা শিক্ষায় বাজেট বৃদ্ধির ‘রূপপুর পদ্ধতি’ প্রত্যক্ষ করলাম। আবার অনেক সময় বাজেট থাকলেও তা খরচে অগ্রাধিকার নির্দিষ্ট করার ক্ষেত্রে সংকট থাকে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত বাজেট (২০১৮-১৯) প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা। জিডিপির ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এটা কম সন্তোষজনক নয়। কিন্তু এই পরিমাণ অর্থ খরচ করা হলেও তার মধ্যে শরীয়তপুরের এই ছয়টি স্কুল বিবেচনায় আসেনি। নতুন অর্থবছরে (২০১৯-২০) বাজেটে ৯ হাজার ২৭০ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ জানে না যে শিক্ষক ও কোমলমতি ছেলেমেয়েদের ভাগ্যে কী ঘটবে। 

স্কুলগুলো বিলীন হওয়ায় লেখাপড়ার ওপর বিরাট ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। নদীভাঙন এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় এমনিতেই অভাব-অনটন লেগে থাকে। ভাঙনে তাদের আবাদি জমিও হারিয়ে যায়। সুতরাং তাদের রুটিরুজি সংগ্রহের টানাপোড়েন আরও বাড়ে। সে কারণে স্কুলগামী ছেলেমেয়েদের সংখ্যা কমে যাওয়াটা তাদের অত বেশি উদ্বিগ্ন করে না। তাদের পক্ষে সংশ্লিষ্ট নেতা বা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিয়ে স্কুল ভবনের জন্য জমি বরাদ্দ এবং ভবন নির্মাণ করিয়ে নেওয়ার মতো সামর্থ্য তাদের থাকে না। 

আমরা আশা করব, শিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অনতিবিলম্বে নড়িয়া সরেজমিন পরিদর্শন করে স্কুল চালু রাখার অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাদি উন্নত করতে পদক্ষেপ নেবেন এবং জমি সংগ্রহ ও পাকা ভবন নির্মাণকাজ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করতে উপযুক্ত উদ্যোগ নেবেন।