কুমিল্লায় বাসস্ট্যান্ডে জলাবদ্ধতা

কুমিল্লা নগরের চকবাজার বাসস্ট্যান্ডের যে বেহাল চিত্র বুধবার প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে এটা আদৌ বাসস্ট্যান্ড কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দেওয়াই স্বাভাবিক। কুমিল্লার রাজগঞ্জ-চকবাজার সড়কের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত বাসস্ট্যান্ডটি গর্তে ভরা। ফলে সব সময় পানি জমে থাকে। এই পানির ওপরই বাস দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। একটি জায়গায় অন্তত এক ফুট উঁচু কাদামাটি জমে আছে। এই পানি ও কাদামাটি মাড়িয়েই যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকদের বাসে উঠতে হয়। পরিবহনশ্রমিকদের যেহেতু রোজ এই পচা দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে নেমে বাস ঠেলতে হয়, সে কারণে তাঁদের অনেকের হাত-পায়ে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে।

নগরের অন্যতম এই বাসস্ট্যান্ডের এমন করুণ দশা, অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনোই মাথাব্যথা নেই! বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এই বাসস্ট্যান্ড দেখভালের দায়িত্ব কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের। তারা যদি তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করত, তবে পরিস্থিতি এ রকম হতো না। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ১৯৭৪ সালে প্রায় দুই একর জায়গা নিয়ে চকবাজার বাসস্ট্যান্ডের যাত্রা শুরু হয়। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিবছর এই বাসস্ট্যান্ড ইজারা দেয়। ইজারার বিনিময়ে পাওয়া টাকা বাসস্ট্যান্ড উন্নয়নেই ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বছরের পর বছর পার হচ্ছে, কিন্তু বাসস্ট্যান্ড সংস্কারের কোনো উদ্যোগই নেই। এই বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন ফেনী, চৌদ্দগ্রামের কাশিনগর ও কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের গোলাবাড়ী এলাকায় শত শত বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। এসব যানবাহন থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা তোলা হয়। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডের কোনো সংস্কার হয় না।

দেশের অন্যতম প্রাচীন শহর কুমিল্লা একসময় ব্যাংক, ট্যাংকের নগরী নামে পরিচিত ছিল। পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতাও ছিল শহরটির আরেকটি বৈশিষ্ট্য। ২০১১ সালের ১০ জুলাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এক অধ্যাদেশে কুমিল্লা পৌরসভা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনের মর্যাদা দেয়। ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে কুমিল্লা মেগাসিটির আওতায় লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করে। সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম প্রায় ৫৩ দশমিক ৪ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। কিন্তু সিটি করপোরেশন যে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছে না, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন সড়ক এখনো ভাঙাচোরা। সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের অবৈধ পার্কিং থাকলেও উচ্ছেদে কোনো উদ্যোগ নেই। বহু পুকুর ও দিঘি আবর্জনায় ভরে গেছে, পরিষ্কারের উদ্যোগ নেই। কিন্তু এভাবেই কি চলবে? এসব দিকে নজর দেওয়ার সময় হয়েছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম বড়ুয়া বলেছেন যে তিনি চকবাজার বাসস্ট্যান্ডটি সংস্কার করবেন। আমাদের প্রত্যাশা, তিনি তাঁর কথা রাখবেন এবং দ্রুত বাসস্ট্যান্ড সংস্কারের কাজ শুরু করবেন।