টাঙ্গাইলে নদীভাঙন

একসময় পদ্মা, মেঘনা, যমুনার মতো বড় বড় নদীর তীরের বাসিন্দারা ভাঙনকে ভবিতব্য বলে ধরে নিতেন। সর্বগ্রাসী ভাঙন ঠেকাতে খুব বেশি কিছু করার থাকতে পারে বলে তাঁরা তখন মনে করতে পারতেন না। এ নিয়ে সংবাদপত্রে লেখালেখি বা প্রশাসনিক তৎপরতা—কোনো কিছুই তাঁদের মনে দাগ কাটত না। 

এখন দিন বদলেছে। একদিকে নদীতে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় তার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা কমেছে, অন্যদিকে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও আর্থিক সামর্থ্য বৃদ্ধির সুবাদে সরকারের ভাঙনরোধের সক্ষমতা বেড়েছে। ফলে নদীভাঙনকে অপ্রতিরোধ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ অনেক কমে গেছে। আর সে জন্যই আজকের দিনে মানুষ ভাঙনকবলিত হলে তারা সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। 

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার যমুনা নদী এবং মির্জাপুর উপজেলার বংশাই ও ঝিনাই নদের পারের বাসিন্দাদের মধ্যে সেই ব্যাকুলতা তীব্রতর হয়েছে। ভূঞাপুরে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সেখানকার কষ্টাপাড়া গ্রামে নদীর তীরে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় লোকজন। কষ্টাপাড়াসহ গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়ি ও ভালকুটিয়া গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। এই ভাঙন ঠেকাতে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। 

অথচ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে নিশ্চিতভাবেই বহু ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে যাবে। গৃহহীন হয়ে পড়বে শত শত পরিবার। অন্যদিকে, মির্জাপুরের কুর্ণী-ফতেপুর সড়কে একটি কালভার্টসহ প্রায় ৪০০ ফুট পাকা রাস্তা ভেঙে গেছে। এ ছাড়া গোড়াইল, চাকলেশ্বর, থলপাড়া ও ফতেপুর এলাকায় কয়েকটি বাড়ির অধিকাংশ ও আবাদি জমিও নদে বিলীন হয়েছে। আট বছর ধরে ওই এলাকায় খননযন্ত্র দিয়ে ব্যবসায়ীরা বালু তোলার কারণে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন। 

সংবাদমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত যেসব খবর এসেছে তা থেকে মনে করা যায়, সেখানকার ভাঙন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। দ্রুত ব্যবস্থা নিলে বহু বাড়িঘর রক্ষা করা সম্ভব হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় বরাদ্দ পাওয়া থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সময়সাপেক্ষ বিষয়। 

আমলাতান্ত্রিক জটিলতাই প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের প্রধান কারণ হয়ে থাকে। ভাঙন মোকাবিলাকে অতি জরুরি জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয় হিসেবে আমলে নিয়ে সব ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়ানো দরকার এবং দ্রুত ভাঙন রোধ কার্যক্রম শুরু করা দরকার। 

প্রবল বর্ষণের মৌসুম চলে এসেছে। পুরোমাত্রায় বর্ষণ শুরু হলে নদী প্রমত্তা হয়ে উঠবে। তখন ভাঙনের তীব্রতা আরও বাড়বে। তার আগেই ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। যেহেতু এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি, সেহেতু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। গোড়াতে সমস্যার সমাধান সহজ ও সাশ্রয়ী। 

সমস্যা বাড়তে থাকলে সমাধান একদিকে কঠিন ও সময়সাপেক্ষ হয়ে ওঠে, অন্যদিকে খরচও জোগাতে হয় অনেক বেশি। সরকারকে বিষয়টি মাথায় নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।