বাংলাদেশে প্রবীণ অধিকার সুরক্ষা: চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ

গত ১৯ জুন ২০১৯, প্রথম আলোর আয়োজনে ও হেল্পএইজ ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশে প্রবীণ অধিকার সুরক্ষা: চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

যাঁরা অংশ নিলেন 

এম এ মান্নান, এমপি: মাননীয় মন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়

রাশেদ খান মেনন, এমপি: সভাপতি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি

এ এস এম আতীকুর রহমান: মহাসচিব, বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ এবং অধ্যাপক, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

খাদিজা নাজনীন: উপসচিব, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় 

রাবেয়া সুলতানা: কান্ট্রি ডিরেক্টর, হেল্পএইজ ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ

শফিকুল ইসলাম: কান্ট্রি ডিরেক্টর, অ্যাকশন অন ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এডিডি) ইন্টারন্যাশনাল

জেরীন খাইর: কান্ট্রি ম্যানেজার, ফ্রেড হলোস ফাউন্ডেশন

শরীফ মোস্তফা হেলাল: নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ উইমেন হেলথ কোয়ালিশন

শরীফা বেগম: সাবেক ঊর্ধ্বতন গবেষণা ফেলো, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ

তোফাজ্জল হোসেন মঞ্জু: সদস্য, সাধারণ পরিষদ, রিক

মো. বেলায়েত হোসেন: ম্যানেজার, হেল্পএইজ ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ

এনামুল হক: প্রকল্প ব্যবস্থাপক, হেল্পএইজ ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ

সঞ্চালক

আব্দুল কাইয়ুম: সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

আলোচনায় সুপারিশ

■ বাসস্থানের পরিকল্পনা অনুমোদনের ক্ষেত্রে মা–বাবার থাকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা ও জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা–২০১৩ দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি

■ প্রবীণ ফাউন্ডেশন গঠন করতে হবে

■ প্রবীণদের জন্য সরকারি বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা দরকার

■ অর্থনৈতিক মুক্তি ও তথ্যের মাধ্যমে প্রবীণদের ক্ষমতায়ন প্রয়োজন

■প্রবীণদের ২৪ ঘণ্টা থাকা-খাওয়ার নিশ্চয়তা, চিকিৎসার ব্যবস্থা, সমবয়সী বন্ধুবান্ধবের সাহচর্য ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা নিশিত করা জরুরি 

■ হাসপাতাল, বিমানবন্দর ও স্বাস্থ্যসেবায় প্রবীণদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুযোগ দেওয়া দরকার সামাজিক সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হওয়া প্রয়োজন

আলোচনা 

আব্দুল কাইয়ুম

দেশে সার্বিক অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি হয়েছে। ফলে মানুষ দীর্ঘায়ু হচ্ছে। এতে ক্রমশ বাড়ছে প্রবীণ নারী ও পুরুষের সংখ্যা। ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে প্রবীণের সংখ্যা দাঁড়াবে মোট জনসংখ্যার এক–পঞ্চমাংশের বেশি।

কিছুদিন আগে ভারতের দিল্লিতে প্রবীণদের বাসভাড়া মওকুফ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশেও প্রবীণদের জন্য সরকারের অনেকগুলো কর্মসূচি আছে। ভাতা সেগুলোর একটি।

প্রবীণদের জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা করা যায় কি না, এসব বিষয় আলোচনায় আসবে। প্রবীণদের সব ব্যাপারে অগ্রাধিকার ও মর্যাদা দেওয়া জরুরি। এখন এ বিষয়ে আলোচনা করবেন এম এ মান্নান।

এম এ মান্নান
এম এ মান্নান

এম এ মান্নান
সবাই এ সরকার থেকে অনেক কিছু আশা করছে। কারণ, সরকার মানুষের কথা শুনছে। এটা ইতিবাচক দিক।
সরকারের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমাদের অনেক সমস্যা আছে। সেসব থেকে গুরুত্বের ভিত্তিতে বাছাই করতে হয়।

এ অসংখ্য সমস্যার মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দারিদ্র্য দূরীকরণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিনি অনেক সাফল্য অর্জন করেছেন। এ ক্ষেত্রে আরও ভালো করার সুযোগ রয়েছে। এখনো প্রতি পাঁচজনে একজন দারিদ্র্যের শিকার। এসব বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি প্রবীণদের নিয়েও কাজ করছি।

প্রবীণদের জন্য আইন ও বিধিমালা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে একটি সাহসী আইন আছে যে আমরা মাতাপিতাকে অবহেলা করতে পারব না। সুতরাং আমরা সঠিক পথে আছি। যেসব সমস্যা আছে, সেগুলো সরকার পর্যায়ক্রমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান করবে।

রাবেয়া সুলতানা
রাবেয়া সুলতানা

 রাবেয়া সুলতানা
বিশ্বব্যাপী জন্মহার কমেছে। স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন হয়েছে। ফলে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। হেল্পএইজ ইন্টারন্যাশনালের এইজওয়াচ ইনডেক্স ইনসাইট রিপোর্ট ২০১৫ অনুসারে বিশ্বে প্রায় ৯০১ মিলিয়ন প্রবীণ মানুষ আছেন।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রবীণের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৮ শতাংশ। ২০৫০ সাল নাগাদ বয়স্ক মানুষের সংখ্যা আরও ব্যাপকভাবে বাড়বে।

এ বিশালসংখ্যক প্রবীণকে মানবিক জীবনযাপনের সুযোগ দেওয়ার মতো রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিক প্রস্তুতি কি আমাদের আছে?

বিশ্বব্যাপী ৪৭ শতাংশ প্রবীণ পুরুষ ও ২৪ শতাংশ প্রবীণ নারী অনানুষ্ঠানিক শ্রমশক্তিতে অবদান রাখছেন। বাংলাদেশে এ সংখ্যা ৬৪ শতাংশ। নারীর ক্ষেত্রে এ সংখ্যা আরও বেশি।

দক্ষিণ–পূর্ব আফ্রিকায় ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ দুস্থ ও অসহায় শিশুর যত্ন করছেন দাদা-দাদিরা। বাংলাদেশেও দাদা–দাদি শিশুদের যত্ন নেন। কিন্তু তাঁরা কেউ স্বীকৃতি পাচ্ছেন না।

প্রবীণদের সেকেলে বলার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের ৫৩ শতাংশ প্রবীণ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী ৬০টি দেশে ষাটোর্ধ্ব প্রবীণের সংখ্যা হবে ৩০ শতাংশ। প্রবীণসংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করা মানে নিজের প্রবীণ জীবনকে সুরক্ষিত করা। সামগ্রিক ও সমন্বিত উদ্যোগকে ত্বরান্বিত করা।

প্রবীণদের নিয়ে শুধু প্রবীণেরা নন, তরুণদেরও কাজ করতে হবে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ প্রবীণবিষয়ক বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। প্রবীণেরা বিপদাপন্ন, দারিদ্র্যের শিকার ও একাকিত্বে জর্জরিত।

সরকারি সেবা কার্যক্রমে প্রবীণদের প্রবেশগম্যতা সীমিত। প্রবীণেরা সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈষম্যের শিকার।

এর কারণ হলো মানুষের মর্যাদা, সম্মান ও ভালোবাসাপ্রাপ্তির মানদণ্ড হিসেবে আয়ের বয়সসীমাকে মনে করা। এ ক্ষেত্রে তাঁদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবলয় তৈরি করতে হবে।

বয়স্কদের জন্য প্রবীণ ফাউন্ডেশন গঠন করা জরুরি। তাঁদের জন্য সরকারি বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা দরকার।

আমরা প্রবীণদের জন্য সর্বজনীন সামাজিক পেনশনের কথাও ভাবতে পারি। নিজের প্রবীণ জীবন সুরক্ষার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত।

এ এস এম আতীকুর রহমান
এ এস এম আতীকুর রহমান

এ এস এম আতীকুর রহমান
বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে প্রবীণবান্ধব। কারণ, ১৯৭২ সালের সংবিধানে পরিষ্কারভাবে প্রবীণদের বিষয়ে বলা হয়েছে।

আমাদের সরকার ও রাজনীতি প্রবীণবান্ধব। রাজনৈতিক ইশতেহারগুলোর দিকে লক্ষ করলেই তা বোঝা যায়। বর্তমান সরকারের ইশতেহারে প্রবীণদের জন্য নানা কার্যক্রমের উল্লেখ রয়েছে।

বার্ধক্য উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক হতে পারে।নারী বয়স্ক হলে তাঁকে সমাজ ও পরিবার থেকে দূরে রাখা হয়।

সত্যিকার অর্থে ভালো থাকতে চাইলে সরকারের নেওয়া কর্মসূচি থেকে দূরে থাকা যাবে না।

বৃদ্ধাশ্রম কখনো বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি, ভবিষ্যতেও পাবে না। তবু কিছু মানুষ আধুনিকতার নামে এটা করার চেষ্টা করছেন।

আমাদের এতিমদের জন্য এতিমখানা আছে। প্রবীণদের দেখাশোনার দায়িত্ব হলো পরিবারের। যখন আমরা প্রবীণ হব, তখন কোথায়, কীভাবে ও কার সঙ্গে থাকব?

সে জন্য প্যালিয়্যাটিভ কেয়ারের ব্যবস্থা করতে হবে, যেটা বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে।

সম্মানের সঙ্গে প্রবীণদের দেখভাল করুন এবং নিজের সফল বার্ধক্যের প্রস্তুতি নিন। প্রবীণেরা বাইরের কেউ নন। প্রবীণ নারীর চেয়ে প্রবীণ পুরুষ সামলানো সহজ।

প্রবীণেরা কথা বলতে চান, কিন্তু কেউ শুনতে চায় না। অথচ এই প্রবীণদের হাত ধরেই সবাই বড় হয়েছে।

প্রবীণদের জন্য চারটি বিষয় দেখা প্রয়োজন। সেগুলো হলো ২৪ ঘণ্টা থাকা-খাওয়ার নিশ্চয়তা, চিকিৎসার ব্যবস্থা, সমবয়সী বন্ধুবান্ধবের সাহচর্য ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা।

বাড়িতে প্রবীণ আছেন কিন্তু এই চার জিনিস সেখানে নেই। সে জন্য এখন অনেক প্রবীণ নিবাস প্রয়োজন। প্রবীণ নারীদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি ও দেনমোহরের টাকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।

শরীফ মোস্তফা হেলাল
শরীফ মোস্তফা হেলাল

শরীফ মোস্তফা হেলাল
একজন প্রবীণ মানুষ সম্মান চান। তিনি চান তাঁর দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার অভিজ্ঞতা ও অবদানকে মানুষ স্বীকৃতি দিক।

পরিবারে প্রবীণদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। প্রাকৃতিক নিয়মে সবাই একসময় প্রবীণ হবে। তাই প্রবীণদের প্রতি সবার যত্নবান হওয়া উচিত।

পরিবার ছোট হয়ে আসায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন শিশু ও প্রবীণেরা। ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে শিশুদের মা–বাবা খুব যত্ন করেন। কিন্তু প্রবীণদের সেভাবে যত্ন করা হয় না।

আমরা প্রবীণ নারীদের নিয়ে কাজ করি। তাঁদের জন্য চ্যালেঞ্জ আরও অনেক বেশি। কেননা, বাংলাদেশে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন পুরুষ। এ ক্ষেত্রে পরিবারের প্রবীণ পুরুষই সর্বেসর্বা। ফলে বাবাকে যেকোনো প্রয়োজনে হোক সম্মান করেন। বাবার মৃত্যুর পরও সম্পত্তির ভার মায়ের হাতে আসে না।

উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী নারী খুব কম সম্পত্তি পান। সেটা তিনি আদায়ও করতে পারেন না। ফলে প্রবীণ পুরুষ নির্যাতনের হার যেখানে ৩৯ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখানে প্রবীণ নারী নির্যাতনের হার ৫৪ দশমিক ৫ শতাংশ।

এখন আমাদের অনেকগুলো আইন হয়েছে। এটা খুব ইতিবাচক দিক। কিন্তু অনেক কমসংখ্যক পিতামাতাই আছেন, যাঁরা ভরণ–পোষণের জন্য সন্তানের বিরুদ্ধে আদালতে যাবেন। ফলে সব সময় তিনি নিগৃহীত হতে থাকেন।

সে জন্য প্রবীণকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসা বা মেরে বের করে দেওয়া খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে। প্রবীণদের নিরাপত্তা দেওয়া দরকার। বিশেষ করে প্রবীণ নারীদের। সরকারি উদ্যোগে যদি কিছু করা যায়, তবে প্রবীণেরা উপকৃত হবেন।

তোফাজ্জল হোসেন মঞ্জু
তোফাজ্জল হোসেন মঞ্জু

 তোফাজ্জল হোসেন মঞ্জু
রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টার (রিক) অনেক দিন ধরে প্রবীণদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে। মাঠপর্যায়ে আমরা প্রবীণদের জন্য সংগঠন করার চেষ্টা করেছি। প্রবীণেরা একত্র হলে অনেক কাজ সহজ হয়। অন্যদের তুলনায় তাঁদের মধ্যে একত্র হওয়ার আগ্রহ একটু বেশি।

অনেকগুলো জেলায় প্রকল্পের ভিত্তিতে কিছু সংগঠন গড়ে তুলেছি। সেখানে সামাজিক অথবা সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। আমরা প্রবীণ সংগঠনের নেতৃত্ব গড়ে তুলেছিলাম। তাঁদের অনেকেই বার্ধক্যের কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন। এখন সেভাবে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। রাষ্ট্র যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রবীণ সংগঠন এবং সহায়তার জায়গায় ভূমিকা পালন করবে, ততক্ষণ এনজিও বা অন্য উদ্যোগগুলো সীমিত আকারে সফল হবে। 

সামাজিকভাবে প্রবীণদের শক্তিশালী করতে হবে। তাহলে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা কার্যকর হবে।

ঢাকায় প্রবীণ নির্যাতন নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। কিন্তু মাঠপর্যায়ে সে রকম সচেতনতা নেই। এ–সংক্রান্ত যে আইন আছে, তা একভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কেননা, এই আইনের অধীনে কেউ বিচার চাচ্ছে না। 

আইন ও সালিসের মাধ্যমে অতীতে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা কাজ করে শিশু ও প্রতিবন্ধীদের আইনি সুরক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করেছে। প্রবীণদের ক্ষেত্রে দাতা সংস্থা ও রাষ্ট্রীয় সহায়তা সেভাবে বিকশিত হয়নি। সে জন্য প্রবীণদের সঙ্গে সামাজিক ও পারিবারিক যেসব বিরূপ আচরণ হচ্ছে, সেগুলো অচিহ্নিত রয়ে যাচ্ছে। 

তাই আইনের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে এগুলো কার্যকর করতে হলে প্রবীণদের বিচার চাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে হবে।

শরীফা বেগম
শরীফা বেগম

শরীফা বেগম
ভবিষ্যতে প্রবীণের সংখ্যা বাড়বে। কিন্তু অতিপ্রবীণের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি বাড়বে। প্রবীণের সংখ্যা বাড়ার ফলে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে এসেছে। এর একটা হলো থাকা-খাওয়ার নিশ্চয়তা। সচেতনভাবে চলার পরও প্রবীণদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়তে হয়।

অল্প বয়সীদের রোগের ধরন ও প্রবীণদের রোগের ধরন ভিন্ন। প্রবীণের সংখ্যা বাড়ছে। অসংক্রামক রোগের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের আর্থসামাজিক পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে আন্তপ্রজন্ম সম্পর্কগুলো পরিবর্তনের ফলে প্রবীণেরা খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়বেন। 

সেবাদাতা (কেয়ার গিভার) ছিলেন মেয়েরা। তাঁদের কাজের সুযোগ বাড়ার ফলে মেয়েদের পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না। প্রবীণদের ওপর নানা রকম নির্যাতন বাড়ছে। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে তা দেখা যায়। তাঁদের প্রতি বৈষম্যও রয়েছে। তাঁদের ইচ্ছা ও চাওয়া-পাওয়ার মর্যাদা দেওয়া হয় না।

একটি জরিপে দেখেছি, প্রবীণ নারীরা প্রবীণ পুরুষের চেয়ে বেশি একা থাকেন। কারণ, বাবার সম্পত্তি থাকে। তাঁর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে তিনি সম্পত্তি দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন। ফলে সন্তানের ওপর তাঁর একটা দখল থাকে। কিন্তু মায়ের সেটা থাকে না।

ষাটোর্ধ্ব প্রবীণের ৪৫ শতাংশ কোনো না কোনো শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। ১০ থেকে ১১ শতাংশ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভোগেন। এগুলো সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা নেই। ফলে প্রবীণদের আমরা ভুল বুঝি। এসব বিষয়ে পরিবারের সদস্যদেরই খেয়াল রাখতে হবে। প্রবীণদের যত্ন নিতে হবে। না হলে সমাজ দুটো ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে।

স্বাস্থ্যসেবার মধ্যে প্রবীণেরা অন্তর্ভুক্ত নেই। নারী নীতির মধ্যে প্রবীণেরা নেই। স্বাস্থ্য সমস্যা প্রবীণদেরই বেশি। সুতরাং সে বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে। প্রবীণদের মেধা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে।

জেরীন খাইর
জেরীন খাইর

জেরীন খাইর
বিষয়টিকে আমি কতগুলো দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চাই। গ্রাম ও শহরের দিক থেকে। এরপর হলো দাতা ও গ্রহীতার (গিভার অ্যান্ড টেকার) দিক থেকে। এরপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো ক্ষমতায়ন। অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নই প্রবীণদের অবস্থার উন্নতি করতে পারে। কেননা, হাতে টাকা থাকলেই একজন প্রবীণ সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন।

এ ক্ষেত্রে উচ্চবিত্ত শ্রেণির ইতিমধ্যে ক্ষমতায়ন হয়েছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে তিনটি উপশ্রেণি রয়েছে। সেগুলো হলো উচ্চ–মধ্যবিত্ত, মধ্য-মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও নিম্ন–মধ্যবিত্ত শ্রেণি। এদের মধ্যে নিম্ন–মধ্যবিত্ত শ্রেণি অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত।

প্রবীণ ভাতা প্রবীণের কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে। তাঁদের উপযোগী পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

প্রবীণের চোখে অনেক সময় ছানি হয়। প্রবীণ পুরুষের চেয়ে প্রবীণ নারীর চোখে ছানি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

কেননা, নারীরা সাধারণত পুরুষের চেয়ে বেশি দিন বাঁচেন। এ ক্ষেত্রে আমরা পরিবারের সদস্যদের বোঝাই যে প্রবীণেরা কোনো বোঝা নন, বরং সম্পদ। কেননা, তাঁদের চোখের অপারেশন করালে তাঁরা দেখতে পারবেন। ফলে তাঁরা নাতি–নাতনিকে দেখভাল করতে পারবেন।

নিম্ন অর্থনৈতিক অবস্থানের প্রবীণেরা বেশি বঞ্চিত হয়ে থাকেন। প্রবীণেরা ডায়াবেটিস ও গ্লুকোমায় ভুগে থাকেন। এ ক্ষেত্রে এসব নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু চাইলেই আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া যায় না। এখন তিন মিলিয়নের বেশি নারী পোশাক কারখানায় কাজ করছেন। 

তাঁরা ফার্মেসি ও সিরামিকশিল্পেও কাজ করছেন। কিন্তু আমরা প্রবীণ নারীদের ঘরে বসে করার মতো কোনো কাজ দিতে পারছি না।

বর্তমানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো এখনকার মাঝবয়সীরা ব্যবহার করতে পারছেন। কিন্তু ২০ বছর পর যেসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আসবে, সেগুলো হয়তো ব্যবহার করতে পারবেন না। তাই তাঁদের এগুলো ব্যবহার করা শেখাতে হবে।

এনামুল হক
এনামুল হক

এনামুল হক
দুর্যোগে মোরা নই দিশাহীন, সঙ্গে আছেন অভিজ্ঞ প্রবীণ। প্রবীণদের সম্পদ হিসেবে চিন্তা করতে হবে। দুর্যোগঝুঁকি হ্রাসে তাঁদের সম্পদ হিসেবে চিন্তা করলে আমরা উপকৃত হব। প্রবীণদের শারীরিক সক্ষমতা হয়তো সীমিত থাকে; কিন্তু তাঁদের অনেক অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান থাকে।

স্থানীয় আপদ ও পরিবেশের পরিবর্তন সম্পর্কে প্রবীণদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দুর্যোগঝুঁকি মোকাবিলার কাজ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয় করে কাজ করলে তা এগিয়ে যাবে।

শফিকুল ইসলাম
শফিকুল ইসলাম

 শফিকুল ইসলাম
পৃথিবী, মানুষ, সমাজ ও অর্থনীতি পরিবর্তিত হবে। এ পরিবর্তনের একটা নিজস্ব ধারা রয়েছে। সুতরাং ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমাদের দাদা–নানির উদাহরণ দিয়ে যদি বলি যে এখন কেন হচ্ছে না। তাহলে শুধু অহেতুক হতাশা বাড়বে। ভবিষ্যৎ পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য করণীয় ঠিক করতে হবে।

২০২১ সালে আবার আদমশুমারি হবে। এই আদমশুমারির জন্য আমরা কিছু সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিতে চাই। বয়স অনুযায়ী জনসংখ্যার তথ্য আসবে। কিন্তু তার সঙ্গে প্রবীণ প্রতিবন্ধীসম্পর্কিত তথ্য যেন আদমশুমারিতে আসে।

২০১৩ সাল ছিল আমাদের সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বছর। এই বছর আমরা কয়েকটা নীতিমালা ও আইন পেয়েছি।

সেগুলো হলো প্রতিবন্ধী অধিকার সুরক্ষা আইন, নিউরো ডেভেলপমেন্ট সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন, জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ও পিতামাতার ভরণ-পোষণ আইন। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমাদের চিন্তাভাবনা।

বাংলাদেশে আইন অত্যন্ত ভালো। কিন্তু আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু অগ্রগতি অর্জন করতে পেরেছি? এ ক্ষেত্রে আরও অগ্রগতি হওয়া প্রয়োজন।

ঢাকা শহরে বসে প্রবীণদের নিয়ে আলোচনা করলে বেশি লাভ হবে না। মাঠপর্যায়ে এসব ছড়িয়ে দিতে হবে।

প্রবীণ ভাতা সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে সেটাকে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ৪৪ লাখ প্রবীণ ভাতা এ অর্থবছরে প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ভাতা থেকে একজন প্রবীণ কতটুকু সুবিধা পাবেন, সেটা ভাবা দরকার। প্রতিবন্ধীদের জন্য জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন রয়েছে। তাই প্রবীণ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন করা প্রয়োজন।

মো. বেলায়েত হোসেন
মো. বেলায়েত হোসেন

মো. বেলায়েত হোসেন
যখন আমরা কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা করি, তখন দৃষ্টিভঙ্গি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রবীণদের আমরা ভঙ্গুর শ্রেণি বলে ধরে নিই। এটা দৃষ্টিভঙ্গিগত একটা সীমাবদ্ধতা। কেননা, আমরা তিন ধরনের প্রবীণের কথা বলছি। সেগুলো হলো ৬০ থেকে ৭০ বছর, ৭০ থেকে ৮০ বছর ও ৮০ বছরের ঊর্ধ্বের প্রবীণ।

এখানে ৬০ থেকে ৭০ বছরের প্রবীণের সংখ্যা অনেক বেশি। তাঁদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় আরও বেশি সংযুক্ত করা দরকার। তাঁদের কাছ থেকে আরও বেশি নেওয়ার সুযোগ আছে। উন্নয়ন পরিকল্পনায় তাঁদের সেবার তুলনায় কাজের সুযোগ বেশি থাকতে হবে।

আবার ৭০ থেকে ৮০ বছরের প্রবীণদের ক্ষেত্রে সেবা দেওয়া ও কাজের সুযোগের অনুপাত যেন সমান হয়। ৮০ বছরের ঊর্ধ্বের প্রবীণদের সেবা দিতে হবে বেশি। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সচেতনতা। প্রবীণ নিজে ও তাঁর পরিবার সচেতন নয়। সে জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ ও অন্যরা মিলে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

অর্থনৈতিক মুক্তি প্রবীণদের ক্ষমতায়ন করে। তেমনি তথ্যের মাধ্যমেও প্রবীণদের ক্ষমতায়ন করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সেই সঙ্গে সামাজিক সচেতনতাও জরুরি। আমাদের বিভিন্ন ক্লাব, খেলার জায়গা ও অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে প্রবীণদের সম্পৃক্ত করতে হবে। অর্থাৎ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে একই সঙ্গে কাজ করতে হবে।

আন্তপ্রজন্ম সম্পর্ক তৈরির জন্য শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মা–বাবাকে সঙ্গে নিয়ে বসবাস করলে ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে। বাসস্থানের পরিকল্পনা অনুমোদনের ক্ষেত্রে মা–বাবার থাকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

খাদিজা নাজনীন
খাদিজা নাজনীন

খাদিজা নাজনীন
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আমাদের দেশের অবহেলিত জনগণের জন্য কাজ করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৮ সালে বয়স্ক ভাতা প্রচলন করেন। আগে ৪০ লাখ প্রবীণ বয়স্ক ভাতা পেতেন। আগামী অর্থবছর থেকে ৪৪ লাখ প্রবীণ বয়স্ক ভাতা পাবেন।

আমাদের প্রবীণ মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ। এর মধ্যে ১ কোটি প্রবীণ দরিদ্র। আমাদের লক্ষ্য হলো ২০২১ সালের মধ্যে এই ১ কোটি প্রবীণকে ভাতা দেওয়া।

অনেকেই সর্বজনীন ভাতার কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আমাদের সম্পদ সীমিত। ভবিষ্যতে আমরা এই জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করব।

প্রবীণদের গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহারে সরকার প্রবীণদের কথা উল্লেখ্য করেছে। তাঁদের আয় ও কর্মক্ষম করে তোলার বিষয়টা এসেছে। বয়স্ক ভাতা সম্প্রসারণের কথাও বলা হয়েছে। হাসপাতাল, বিমানবন্দর ও স্বাস্থ্যসেবায় তাঁদের সুযোগ দেওয়ার কথা এসেছে।

বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ১৪ লাখ নারীকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে ১৭ লাখকে দেওয়া হবে। তাঁদের একটা অংশ প্রবীণ। অর্থাৎ প্রবীণদের ৪০ লাখের সঙ্গে এই সংখ্যাটাও যোগ হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৮৫টি শিশু পরিবার আছে। ছেলেশিশুদের জন্য ৪৩টি পরিবার আছে। এখানে ১০ জন করে পুরুষ প্রবীণ থাকতে পারবেন।

মেয়েশিশুদের জন্য আছে ৪১টি পরিবার। এখানেও ১০ জন করে নারী প্রবীণ থাকতে পারবেন। এ জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে এবং বিভিন্নভাবে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে, যেন প্রবীণেরা শিশু পরিবারগুলোতে আসেন।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিচালিত ছয়টি প্রবীণ নিবাস আছে। এই প্রবীণ নিবাসগুলোতে ৫০ জন করে থাকার সুযোগ আছে। প্রবীণ হলেই কেউ অক্ষম হয়ে যান না। এ জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সমন্বিত ক্ষুদ্রঋণ ও সঞ্চয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা ২০১৯ করেছে, যা গত মাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেছেন।

রাশেদ খান মেনন
রাশেদ খান মেনন

 রাশেদ খান মেনন
আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েই এগোতে হবে। এই যদি আমাদের নীতি হয়, তাহলে প্রবীণদের বাদ রেখে কোনো কিছু করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে আমরা এগিয়ে আছি। প্রবীণদের ক্ষমতায়ন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৮ সালে যে বয়স্ক ভাতা চালু করেন, তা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখন সংখ্যার দিক থেকে তা ৪৪ লাখ হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই প্রবীণেরা শারীরিকভাবে সক্ষম থাকেন না। সে জন্য সামাজিক সর্বজনীন পেনশন স্কিম হওয়া প্রয়োজন। যেন সব মানুষ এর উপকার পায়। খেতমজুর, কৃষক ও পোশাকশ্রমিক, অর্থাৎ তাঁদের দিয়ে শুরু করতে হবে, যাঁদের এটা বেশি প্রয়োজন।

মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তনের জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। এটা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নয়, সামাজিক ন্যায়বিচার মন্ত্রণালয় হওয়া উচিত। আমার কমিটি থেকেও এই প্রস্তাব আনার চেষ্টা করব। এতে মন্ত্রণালয়ের মর্যাদা বাড়বে।

সমস্ত পৃথিবী পরিবর্তিত হচ্ছে। একক পরিবারের সংখ্যা বেড়েছে। শিশুরা দাদা–নানির কাছে ঠাকুমার ঝুলির গল্প শোনার অবস্থায় আর নেই। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা কীভাবে মানিয়ে নেব, সে জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। (প্রবীণ সংঘ) বৃদ্ধাশ্রম নয়, এটা হওয়া উচিত প্রবীণ নিবাস। কেননা, বৃদ্ধাশ্রমের সঙ্গে একটা দীর্ঘশ্বাস জড়িয়ে থাকে।

দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন খুব প্রয়োজন। আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে সমাজকে বের করে নিয়ে আসতে হবে। যেখানে আমরা কেবল প্রবীণদের সম্মান দেওয়া নয়, তাঁদের অভিজ্ঞতা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাব।

আসুন আমরা যেন আমাদের পূর্বসূরি, যাঁরা আমাদের জন্য একটি দেশ ও সংবিধান রেখে গেলেন, তাঁদের অনুসরণ করি। দেশটাকে যেন মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে তুলে না দিই।

এম এ মান্নান

সর্বজনীন সামাজিক ভাতার কথা এসেছে। এটা আমি নীতিগতভাবে সমর্থন করি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সক্ষমতার ব্যাপার রয়েছে। ভবিষ্যতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব ঠিক করা হবে।

আমরা সবাইকে বিনা মূল্যে বই দিচ্ছি, যার সঙ্গে আমি একমত নই। কেননা, অনেকেরই বই কেনার সামর্থ্য রয়েছে। আমি বাছাইয়ের পক্ষে। ইংল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশেও তা–ই করা হয়। 

প্রবীণের মানসিক অশান্তি মোকাবিলা করার মতো সক্ষমতা প্রবীণ নিবাসের আছে কি না? প্রবীণ নিবাসে আনারও একটা পদ্ধতি উন্নয়ন করতে হবে। কেননা, অনেকেই জানেন না। আবার অনেকেই নীরবে সহ্য করেন। তাই সমাজকর্মীদের বাছাই করে অসহায় প্রবীণদের নিয়ে আসতে হবে।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক কল্যাণমূলক কাজে হাত দিচ্ছেন। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও শিল্প নিয়ে তিনি কাজ করছেন। এ বিষয়ে তিনি কাজ করতে চান। এটা একটা ইতিবাচক দিক। 

কিন্তু যাঁরা গণমাধ্যমে কাজ করেন, তাঁদের উচিত সরকারের কল্যাণমূলক কাজগুলো সঠিকভাবে তুলে ধরা।

আব্দুল কাইয়ুম

প্রবীণদের ভালোভাবে ও প্রশান্তি নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য দিনে অন্তত ১৫ থেকে ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করা প্রয়োজন। সেটা যোগব্যায়াম বা শ্বাসক্রিয়া অনুশীলন হতে পারে। এর জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি।

আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।