গুদামে ৫০০ কোটি টাকার বস্তা

বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশন (বিজেএমসি) একটি লোকসানি সংস্থা হিসেবে পরিচিত। সংস্থাটি সরকারের কাছ থেকে বহুবার নানা অজুহাতে থোক বরাদ্দ পেয়েছে এবং এখনো সেই প্রাপ্তির ধারা কমবেশি চলছে। তবে তারা ঈদের সময়ও তার কর্মীদের বোনাস দিতে পারে না, সরকারের কাছে হাত পাতে।

অর্থমন্ত্রী থাকাকালে বর্ষীয়ান রাজনীতিক আবুল মাল আবদুল মুহিত বিজেএমসি সম্পর্কে একটি কঠোর মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সরকার এই সংস্থাকে বাঁচাতে অনেক টাকা দিয়েছে। কিন্তু এটা প্রমাণিত যে একে বাঁচানো যাবে না। তাই এটি বন্ধ করে দেওয়াই উত্তম। তাঁর সেই অভিজ্ঞতাপ্রসূত মতামত সরকারের নীতিনির্ধারকেরা কীভাবে দেখছেন, আমরা তা জানি না। সরকার সংস্থাটিকে লোকসানি ধারা থেকে ফেরাতে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দিয়েছে। কিন্তু ২২টি পাটকল নিয়ে সংস্থাটি যথারীতি অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। অথচ কোনো রুই-কাতলাকে কাঠগড়ার মুখোমুখি হতে হয়নি।

 বিজেএমসির গুদামে এখন ৭০০ কোটি টাকার পণ্য পড়ে আছে, কিন্তু ক্রেতা নেই মর্মে খবর পড়ে আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না, প্রতিবছর কয়েক শ কোটি টাকা লোকসান দেওয়া সংস্থাটির ব্যবস্থাপনাগত দেউলিয়াপনা অব্যাহত রয়েছে। স্বর্ণসূত্রের দেশে পাটকলসংক্রান্ত একটি তদারকি সংস্থা মুখ থুবড়ে পড়েই থাকবে, স্বনির্ভর বা শক্তিশালী হতেই পারবে না, সেটা যুক্তির কথা নয়। এটা পরিষ্কার যে সংস্থাটি অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির শিকার। চাহিদা ও জোগানই হলো অর্থনীতির মূলমন্ত্র। চাহিদা এবং ক্রেতা সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে যারা প্রায় ৫০০ কোটি টাকা মূল্যের চটের বস্তা বানাতে পারে, জরুরি ভিত্তিতে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার।

১১ জুলাই প্রথম আলো অনলাইন প্রতিবেদন বলেছে, প্রায় সাড়ে ৬৫ হাজার টন বস্তা পড়ে আছে, যার দাম ৫০০ কোটি টাকার বেশি। দেশি-বিদেশি বাজার মন্দা। দেশি বাজারে বিক্রি করলে উৎপাদন খরচও উঠবে না। এমনকি সরকার বলছে, তারা অর্ধেক দামে কিনতে পারে। কর্মকর্তাদের কেউ কেউ দাবি করছেন, ‘আফ্রিকার দেশ সুদানের চাহিদা মাথায় রেখে তাঁরা এসব বস্তা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু গত জানুয়ারি থেকে সুদানে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হলে বিজেএমসির সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।’

আমরা স্মরণ করতে পারি, সুদানে রপ্তানি নিয়ে জটিলতা এমনকি দুর্নীতির অভিযোগ ২০১৬ সালেও উঠেছিল। এখনো তার ধারাবাহিকতা চলতে থাকা কোনো কাজের কথা নয়। প্রকৃত সত্য উদ্‌ঘাটনে পাট প্রশাসনসংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানাই। পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীও সংস্থাটির ‘ভেতরের দুর্নীতি’ বন্ধে জোর দিয়েছেন। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা তো পাট মন্ত্রণালয়কেই বাঁধতে হবে।