গুলিস্তানের ফুটপাত বেদখল

যানবাহন চলাচলের জন্য রাস্তা আর হাঁটার জন্য ফুটপাত—ঢাকা শহরের বাস্তবতায় এই কথার সত্যতা পাওয়া যে কত কঠিন, তা পথচারীদের জানতে বাকি নেই। ফুটপাত আর রাস্তার একাংশ দখল করে, অর্থাৎ হাঁটার অধিকারকে তোয়াক্কা না করে হকারদের ব্যবসা করাটা সবার গা সওয়া হয়ে গেছে। মুখে না বললেও প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকেরা কার্যত এটি মেনেও নিয়েছেন। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে কিছুদিন পরপরই ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ অভিযান হয়। পথচারীরা দু–তিন দিন একটু স্বচ্ছন্দে চলাচল করেন। তারপর আবার আস্তে আস্তে আগের অবস্থা ফিরে আসে। গুলিস্তান এলাকায় কিছুদিন আগে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছিল। ফুটপাত দখলমুক্ত হয়েছিল। প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আবার সেখানে হকাররা এমনভাবে জাঁকিয়ে বসেছেন যে ফুটপাতে হাঁটার জায়গা নেই। সেখানে পোশাক, খেলনা, ফল, সবজি, চামড়াজাত দ্রব্য—সবই আছে। পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা দিয়ে চলাচল করছেন। সংকুচিত ফুটপাতে গুঁতোগুঁতি ছাড়া পথচারীরা এগোতেই পারছেন না।

ফুটপাতে হকারদের বেপরোয়া আচরণজনিত এই বিশৃঙ্খল অবস্থাটি নতুন নয়। অনেক বছর ধরেই এ অবস্থা চলে আসছে। প্রশ্ন ওঠে, এই হকাররা সবার চোখের সামনে এত দুঃসাহসী হয়ে উঠছেন কী করে? বিধিভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে পথচারীদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে সিটি করপোরেশন ও পুলিশের এত অনীহা কেন? তাহলে সাধারণ নাগরিকেরা কি তাঁদের কাছে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক? হকার উচ্ছেদের প্রসঙ্গ এলে অনেকে গরিব মানুষের রুটি–রুজির প্রশ্নটি সামনে নিয়ে আসেন। তাঁরা ভুলে যান ফুটপাত হাঁটার জন্য। তাঁরা ভুলে যান এটি দখল করে কেউ রুটি–রুজির সংস্থান করতে বসলে তার বিরোধিতা করাই বিধেয়। শহরবাসী হকারমুক্ত ফুটপাতে হাঁটার অধিকার চাইবেন, সেটাই স্বাভাবিক। তাঁদের এই চাওয়াকে ‘গরিবের রুটি–রুজির বিরোধিতা’ হিসাবে দাঁড় করানোর চেষ্টাটিই ‘রাজনীতি’।

অবশ্যই গরিবের জীবিকা অর্জনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কিন্তু রাস্তা বা ফুটপাত দখল করে সেই জীবিকা নিশ্চিত করা অনুমোদন করা যায় না। গরিবের জীবিকার অধিকারকে স্বীকার করা আর যথেচ্ছাচার মেনে নেওয়া এক কথা নয়। ফুটপাতের ওপর হকারের অধিকার যদি মানতে হয়, তাহলে যুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি ফুটপাতের প্রতিটি ইঞ্চির ওপরই সেই অধিকার মেনে নিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত দেশে একজন হকারও ফুটপাতে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতে চাইবেন, ততক্ষণ তাঁকে সে জায়গাটি ছেড়ে দিতে হবে। সেই দাবি যদি না মানা হয়, তাহলে ফুটপাতের ওপর কারও দাবি মানারই প্রশ্ন আসে না।

সরকারের যদি গরিবের প্রতি সত্যিকারের দরদ থাকে, তাহলে তাদের জন্য জীবিকা অর্জনের যথার্থ পরিবেশ তৈরি করতে পারে। নগরবাসীর পথের অধিকার কেড়ে নিয়ে কারও জীবিকার অধিকার নিশ্চিত করা যৌক্তিক হতে পারে না।