বর ছাড়াই 'বরযাত্রী'!

নাসার প্রতিযোগিতা জয়ী টিম অলিক।
নাসার প্রতিযোগিতা জয়ী টিম অলিক।

‘পাত্রী’ পেয়েও বিয়েতে যেতে পারলেন না ‘বর’, কিন্তু ‘বরযাত্রীরা’ ঠিকই চলে গেলেন। এমন তুলনা নাসার প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চার সদস্যর টিম ‘অলিক’-এর ক্ষেত্রে ভালোই খাটে। ভিসা না পেয়ে ফ্লোরিডার নাসা কেনেডি স্পেস সেন্টারে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু তিন দিনের আয়োজনে অংশ নিতে পারেননি বিজয়ীরা। কিন্তু সহযোগী হিসেবে যাঁদের যাওয়ার কথা, তাঁরা ঠিকই পৌঁছে গেছেন। তাঁরা হলেন, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ছয় কর্মকর্তা, বেসিসের পরিচালক এবং এবার ও প্রথম স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ আয়োজনের আহ্বায়ক। নাসার ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে ভালো বাজেটও ছিল। 

এত বড় আয়োজনে বিজয়ী হওয়ার পরেও যেতে না পেরে বেশ আক্ষেপ প্রতিযোগীদের। এ আয়োজনে যোগ দিতে মার্কিন দূতাবাসে ১৬ জনের ভিসা চাওয়া হয়েছিল। যাঁদের মধ্যে জনসংযোগ কর্মকর্তার মতো পদধারীও আছেন। সাংবাদিকেরা প্রতিযোগীদের কাছে বারবার জানতে চাওয়ায় একটি বিবৃতি ফেসবুকে দিয়ে রেখেছেন বিজয়ী দলের সদস্য জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের ছাত্র আবু সাবিক মাহদি। তিনি বলেছেন, কেন তাঁরা যেতে পারেননি, তা তিনি বুঝতে পারছেন না। ভিসা না হওয়ার নানা কারণ থাকতে পারে। তবে প্রতিযোগীরা না পেলেও সহযোগীরা ঠিকই ভিসা পেয়েছেন।

বিজয়ীদের ছাড়া প্রতিনিধিদল ও প্রতিযোগিতার আহ্বায়কদের বিদেশযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ আছে বলে জানিয়েছেন বেসিস পরিচালক দিদারুল আলম ও ইনোভেশন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা আরিফুল ইসলাম। ‘প্রতিযোগীরা যেতে পারেননি, গেছেন প্রতিনিধিরা’ শিরোনামে প্রথম আলোয় খবর প্রকাশের পর ফেসবুকে দিদারুল আলম জানালেন, তিনি ওই প্রোগ্রামের এবারের আহ্বায়ক। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে প্রোগ্রামটির জন্য প্রচার করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে তাঁদের অবশ্যই যাওয়া দরকার। বিজ্ঞানী ও আয়োজকদের সঙ্গে অনেক মিটিং আছে। বাংলাদেশে কিছু আনার চেষ্টা করছেন তাঁরা। ভিসার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রোগ্রামে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে তাঁদের। শেষ মুহূর্তে মিটিংয়ে ‘না’ করা অসম্ভব।

আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ইনোভেশন ফোরাম হিসেবে নয়, আমি যাচ্ছি নাসা স্পেস অ্যাপসের প্রথম কনভেনর এবং এবারের জয়েন্ট কনভেনর হিসেবে। সেখানে নাসা স্পেস অ্যাপসের গ্লোবাল কমিটির মিটিংয়ে আমাকে থাকতে হবে। এ ছাড়া তিনটি আলাদা মিটিং আছে। প্রতিযোগিতার বিভিন্ন প্রোগ্রামের সঙ্গে আয়োজক হিসেবে কিছু কার্যক্রমে যুক্ত থাকতে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। হোস্ট কান্ট্রি হিসেবে নাসাকে আমরা এ প্রোগ্রাম বাংলাদেশে আসার প্রস্তাব দেব।’

মাহদি অলিকের ফেসবুকে লিখেছেন, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ থেকে তাঁদের জানানো হয়েছে, তারা যেহেতু সব খরচ বহন করবে, সেহেতু এবং নাসাকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা তাঁদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন। আইসিটি মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি সালমা সিদ্দিকা মাহাতাব, মো. আবুল খায়ের, হাইটেক পার্কের ডেপুটি সেক্রেটারি মো. আবদুল হাই, আইডিয়া প্রোজেক্টের কাজী হোসনা আরা ও আইসিটি ডিভিশনের প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা একরামুল হক। যেতে চাইলেও ভিসা পাননি বেসিসের জনসংযোগ কর্মকর্তা ওয়াসেক সাজ্জাদ, বেসিসের সচিব হাশিম আহমেদ, বেসিসের ডেপুটি ব্যবস্থাপক মনিরুল হক। অর্থাৎ প্রতিযোগী চারজনের চেয়ে নাসাকে ধন্যবাদ জানাতে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে ইচ্ছুক মানুষের পাল্লাই বেশি ভারী।

মাহদি বলেছেন, ‘শেষ পর্যন্ত আমরা ভিসার চেষ্টা করেছি। আমরা এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারছি না।’

নাসার সঙ্গে যুক্ত একজন গবেষক প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রতিযোগীরা নাসায় এলে ভালো হতো। বেশ কিছু প্রোগ্রাম ও প্রকল্প যুক্ত হতে পারত।

প্রতিনিধিদলের নাসায় যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আলোচনা হচ্ছে। তুসিন আহমেদ লিখেছেন, ‘আমি দেখিনি, আমি শুনিনি, আমি বলিনি অনেক কিছু। আমি জানিনি, আমি বুঝিনি, আমি ছুটেছি...’

নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০১৮-এর আহ্বায়ক ও বেসিসের পরিচালক দিদারুল আলম সানি বলেন, ‘প্রতিযোগীদের ভিসা পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হয়েছে। এরপরও তাঁরা ভিসা না পাওয়ায় প্রতিনিধি হিসেবে আমরা নাসায় যাচ্ছি। ভিসা না হওয়ার বিষয়টি নাসাকে অবগত করা হয়েছে। বুধবার নাসা থেকে পাঠানো এক মেইলে প্রতিযোগী চার শিক্ষার্থীকে বাংলাদেশ থেকেই ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিতে বলা হয়েছে।’

এখন প্রতিযোগীরা দেশ থেকে ভিডিওতে তাঁদের উপস্থাপনা করবেন আর যুক্তরাষ্ট্রে নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করবেন ‘প্রতিনিধিরা’। সরকারি অর্থ খরচ করে পাওয়া সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে আশা করি।

মো. মিন্টু হোসেন: সাংবাদিক