পচা পেঁয়াজের বিষাক্ত ঝাঁজ

দুই দেশের সীমান্তবর্তী স্থলবন্দর মানেই মালামালভর্তি ট্রাক-লরির আসা–যাওয়া। এসব ট্রাকে নানা ধরনের পণ্য আনা–নেওয়া হয়। এর মধ্যে শাকসবজি, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুনের মতো দ্রুত পচনশীল পণ্যও থাকে। সীমান্ত পার হয়ে প্রথমে স্থলবন্দরে ট্রাক-লরিগুলো দাঁড়ায়। সেখান থেকে মাল খালাস করে তা বন্দরের নির্ধারিত ইয়ার্ডে অথবা আশপাশের বেসরকারি গুদামে রাখা হয়। দ্রুত পচনশীল পণ্যের কিছু অংশ আনার পথে নষ্ট হয়। এই নষ্ট পণ্য আমদানিকারকেরা বাজার পর্যন্ত নেন না। বন্দর এলাকায়ই তাঁরা তা ফেলে দেন। যেহেতু এখানে টনকে টন বর্জ্য জমা হয়, তাই বন্দরেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকা অপরিহার্য। অথচ সেই অপরিহার্য ব্যবস্থাপনা নেই সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরে।

একটি স্থলবন্দরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকলে স্থানীয় পরিবেশ ও বাসিন্দাদের জন্য তা কতটা হুমকি হয়ে উঠতে পারে, সেটি ভোমরা এলাকার বাসিন্দারা তো বটেই, সেখানকার গাছগাছালি পর্যন্ত টের পাচ্ছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, সাতক্ষীরা-ভোমরা সড়কের পাশে নবাতকাটি এলাকা আমদানিকারকদের ফেলে দেওয়া পচা পেঁয়াজের ঝাঁজ ও দুর্গন্ধে বসবাসের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলার কোনো ব্যবস্থা না রাখায় ময়লা–আবর্জনা সড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে। বিশেষ করে সড়কের পাশে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণে পচা পেঁয়াজ ফেলার কারণে সড়কের পাশের শতাধিক কড়ইগাছ মরে গেছে।

ভোমরা বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে প্রায় দুই হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ দেশে আমদানি করা হয়। এসব পেঁয়াজ বন্দরের নির্ধারিত ইয়ার্ড ছাড়াও বেসরকারি গুদামে রাখা হয়। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আনতে আনতে কিছু পেঁয়াজ পচে যায়। পরে গুদামে রাখায় আরও কিছু পচে। ব্যবসায়ীরা সেগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর আগে বাছাই করেন। এ সময় পচা পেঁয়াজগুলো বাইরে ফেলে দেওয়া হয়।

অতি অবাক করার মতো বিষয় হলো, ১৯৯৬ সালে অর্থাৎ ২৩ বছর আগে ভোমরা বন্দরের কার্যক্রম শুরু হলেও এখানে বর্জ্য ফেলার কোনো ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। কোনো উপায় না পেয়ে ব্যবসায়ীরা সড়কের পাশে এসব পচা পেঁয়াজ-রসুনসহ অন্য পচা পণ্য ফেলছেন। পচা পেঁয়াজ ও বর্জ্যের ঝাঁজ ও গন্ধে এলাকার লোকজন দুর্ভোগে পড়েছে।

কোনো রকম বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছাড়াই এত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থলবন্দর কীভাবে ২৩ বছর ধরে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে, সেটি এক বিস্ময়। তার মানে স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার ঝুঁকির বিষয়টি প্রথম থেকেই কর্তৃপক্ষ আমলে আনেনি। এই উদাসীনতা আত্মঘাতী। এখান থেকে সরে এসে অবিলম্বে সেখানে মানসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা দরকার। কর্তৃপক্ষের মনে রাখা দরকার, একটি জনগোষ্ঠী ও নির্দিষ্ট একটি এলাকার পরিবেশ প্রতিবেশকে দীর্ঘ মেয়াদে ভোগান্তির মধ্যে রাখার অধিকার কারও নেই।