এক ছাত্রীর সাহসিকতা

এ রকম পরিবেশে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে এক ছাত্রীর সাহসিকতার খবর এসেছে। সেখানকার ফরিজা খাতুন উচ্চবিদ্যালয়ের এক ছাত্রী গত শনিবার বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে এক বখাটে তরুণ তাকে উত্ত্যক্ত করছিল। তরুণটি অশ্লীল কথাবার্তা ও অঙ্গভঙ্গিতে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করতে করতে এবং মুঠোফোনে তার ছবি তুলতে একদম বিদ্যালয়ের ফটক পর্যন্ত পৌঁছে যান। মেয়েটি সারা পথ ধৈর্য ও সাহস ধরে রাখে; বিদ্যালয়ের ফটকে পৌঁছে সে দ্রুত ভেতরে না ঢুকে সেখানে ওই সময় কর্তব্যরত এক পুলিশ সদস্যকে তার এই নিগ্রহের কথা জানায় এবং তার পিছু পিছু আসা বখাটে তরুণটিকে দেখিয়ে দেয়। পুলিশ তৎক্ষণাৎ তরুণটিকে আটক করে এবং মেয়েটির অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে তরুণটির মুঠোফোনের ছবিগুলো পরীক্ষা করে মেয়েটির ছবি দেখতে পায়। পুলিশ এই ঘটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানালে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ওই উত্ত্যক্তকারী তরুণকে ছয় মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।

নিগ্রহের শিকার কিশোরীটি শুধু যে সাহসের পরিচয় দিয়েছে তা–ই নয়, সে বুদ্ধিও খাটিয়েছে। সে একলা পথে বখাটে তরুণটিকে প্রতিরোধ করেনি। সে অপেক্ষা করেছে বিদ্যালয়ের ফটকে পৌঁছা পর্যন্ত। সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য কিশোরীর অভিযোগ শুনে বখাটে তরুণটিকে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করে যথার্থ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। ইউএনও ঘটনাটি আমলে নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে নারীর প্রতি সংবেদনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। অর্থাৎ, এই ঘটনায় অপরাধের শিকার কিশোরী এবং আইন প্রয়োগ ও বিচারব্যবস্থা যথার্থভাবে কাজ করেছে। বাংলাদেশে এ রকম ঘটনা বিরল। ওই কিশোরীর বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতা অনুসরণীয়।

তবে আমরা একটি আশঙ্কার কথাও এখনই বলে নিতে চাই। ওই বখাটে তরুণকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সে এখন কারাবন্দী। কিন্তু দণ্ড ভোগ করার পরে তিনি তো কারাগার থেকে বেরিয়ে আসবেন। তখন ওই কিশোরী তাঁকে ‘জেল খাটানোর অপরাধে’ তাঁর রোষের শিকার হবে না, এমন নিশ্চয়তা কি আছে?

আমরা এখনই সেই নিশ্চয়তার দাবি জানাচ্ছি। ওই তরুণ কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার পর ফেঞ্চুগঞ্জ থানা–পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই তার ওপর নজর রাখতে হবে, যেন তিনি ওই কিশোরীর কোনো ক্ষতি করার সাহস না পান।